বাক্‌ ১৪৪ ।। আমার সফর ১০ ।। দূর্বাদল মজুমদার


 

ডুমারিয়া। পশ্চিম সিংভূম জেলার ঘাটশিলা মহকুমার (ওরা বলে প্রমণ্ডল) ধলভূমগড়ের একটি ব্লক। অসিতদা যেখানে কাজ করছিলেন সেটা ডুমারিয়া ও গুড়াবান্ধা ব্লকের মাঝখানে পড়ে। দলমা পাহাড়শ্রেণীর একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত পাহাড়-জঙ্গল অধ্যুষিত একটি কসবা। ধলভূমগড় থেকে কুড়ি কিলোমিটার আর কোকপাড়া স্টেশন থেকে বারো কিলোমিটার দূরে এই এলাকা।ছোট নাগপুর মালভূমিকে উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি চিরে দিয়েছে আঁকাবাঁকা সুবর্ণরেখা। সেই নদীর পশ্চিমদিকে পড়ে এই এলাকা। গুড়াবান্ধা থেকে মাইল পাঁচেক দূরেই ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা বর্ডার। বর্ডার পেরিয়ে বিশ-কিলোমিটার পশ্চিমে এগোলেই বাংরিপোসির উত্তর প্রান্ত, যার কথা প্রথমপর্বে বিস্তারিত বলেছি। কিন্তু এই লেখার ঘটনা বাংরিপোসিরও আগে, আমার প্রথম ঘর ছাড়ার সময়কার। বাংরিপোসি আমি এর প্রায় ছ'মাস পরে যাই। পাঠকের জ্ঞাতার্থে জানাই, সে ঘটনা এই ধারাবাহিক লেখার প্রথম পর্বে আছে । 

           ডুমারিয়ার  থেকে উত্তরে দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুসাবনি কপারমাইনস্। এখানে তামার খনি আছে। উত্তর-পশ্চিমে চল্লিশ কিমি এগোলেই বাদামপাহাড়। বাদামপাহাড় নামটা শুনেই আমার সেই বিখ্যাত কবিতার লাইন মনে পড়েছিল, "আমার ব্যক্তিগত বসন্ত দিনের চটি আমি হারিয়েছি বাদামপাহাড়ে।" কবি উৎপল কুমার বসু তাঁর ব্যক্তিগত লিখনভঙ্গিমাও এখানে ফেলে গিয়েছিলেন।

 

তখন একটা সময় ছিল, যখন সবকিছুতেই রোমাঞ্চ লাগত। কেউ বিশ্বাস করুক বা না-করুক আমি সেই চটিজোড়া বাস্তবিক খুঁজেছিলাম। অনেক লিখনভঙ্গিমা আমি পাহাড়ের গাছে গাছে ঝুলতে দেখেছি! আমলকী গাছের পাতার ঝুরুঝুরু আর বুনো কামরাঙার পাতায় রোদ পড়ে আলোর ঝিলিমিলিজুড়ে ছড়িয়ে ছিল সে সব। পাহাড়ের মাথায় বসে দূর উপত্যকার দিকে তাকিয়ে দেখতাম, মাথায় কাঠের বোঝা, পিঠের ঝোলায় বুনোফল মেটে আলু, বনের মাশরুম ইত্যাদি নিয়ে,  জঙ্গলে ঢাকা সরু ফিতের মতো গেরুয়া রাস্তায় নির্জন দেহাতি-রমনী চলে যাচ্ছেন, পিছনে তাঁর ছোট শিশু, উলঙ্গ, টলোমলো পায়ে  নিতান্ত অনিচ্ছায়  হাঁটছে। ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত সে। এই ছবি মনে গাঁথা হয়ে যেত। আর কান্না পেত খুব। কেন কান্না পেত আমি জানি না, কিন্তু নিজেকে ওই শিশুর জায়গায় অবিকল দেখতে পেতাম। হয়তো মা মিছে সান্ত্বনা দিতে বলছেন, ---আর একটুখানি খোকা, ওই তো বন শেষ হয়ে এল, ও-ই তো আমাদের গাঁ। ওই তো! ও-ই তো! আর একটুখানি। 

 

এই "আর একটুখানি" নিয়েই আমাদের জীবন-যাপন। কেউ বাঁচার অদম্য-তাড়নায় খোঁজে, কেউ খোঁজে ভোগবিলাসী তাড়নায়। আমি জানিনা, ওই শিশু তার বাড়ির দাওয়ায় পৌঁছনোর পর কী অনুভূতি হবে তার! মা এর সান্ত্বনার পরও আমি জানি এখনও অনেকদূর হাঁটতে হবে তাকে। এখান থেকে দূরে দু'টো  বিন্দুর মতো দেখা যাচ্ছে তাদের, কিন্তু তাদের কথাবার্তা যেন আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।              

অসিত সরকারের বাড়ি গড়বেতার সন্ধিপুরে, আগেই বলেছি। আমাকে, ধলভুমগড় যাওয়ার আগে তার বাড়িতে দিনকয়েক থাকতে হয়েছিল। তার কিছু চাষবাসের কাজ ছিল, সেসব সেরে একদিন আমরা বেরিয়ে পড়লাম। গড়বেতা থেকে খড়্গপুর, সোখান থেকে টাটা লোকাল ধরে ধলভুমগড়। নামেই স্টেশন, কেবল একটা টিকিট ঘর আর তাতে টিনের ছাউনি। মোরাম বিছানো, ঘাস আর আগাছায় ঢাকা প্ল্যাটফর্ম। রাত-বিরেতে ট্রেন থেকে নামলে সাপের লেজে পা পড়ে। 

স্টেশনের একটু দূরেই দলমা'র পাহাড়শ্রেণী, ন্যাড়া, কোথাও কোথাও বনতুলসীর ঝোপে ঢাকা। পাদদেশে শালের ঘন বন।তারও ওপাশে আছে বৃটিশ আমলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি এয়ারস্ট্রিপ, সেটা পরে দেখেছিলাম, হেঁটে বেলপাহাড়ি যাওয়ার সময়। 

                        

 ট্রেনে আসার সময় অসিতদা বলছিলেন, কীভাবে মানুষের মধ্যে থাকতে হবে, কীভাবে কাজ করতে হবে। এখানকার মানুষরা কীরকম, তাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবন-যাপন, সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।                                                                ধলভুমগড়ে না নেমে আমরা নামলাম কোকপাড়া স্টেশনে। অসিতদা জিজ্ঞেস করেছিলেন, স্টেশনে নামার পর  কীভাবে যেতে চাই আমি? বাস তো ওদিকে চলেনা।অটো চলে সুবর্ণরেখার তীর অবধি। তারপর নৌকায় নদী পেরিয়ে আবার অটো। অথবা কোকপাড়া স্টেশন থেকে অটোয় নদী পর্যন্ত, তারপর হেঁটে যেতে হবে। 

আমি হেঁটে যাওয়ার অপশনটাই নিলাম। কেননা কোন এলাকাকে হাড়হদ্দে চিনতে-জানতে হলে হাঁটার বিকল্প নেই। প্রতিটি গাছ, দোকানপাট, ঘরবাড়ি, নালা খাল বিল সব মাথায় গুঁজে রাখা যায়। যদিও এই রাস্তায় কোন দোকান দেখিনি তখন। কোকপাড়া থেকে রাস্তা সাপের মতো এঁকেবেঁকে নেমে গেছে নদীর গাবাল অব্দি।এখানে ভূমিজ,সাঁওতাল ও মাহাতদের বসতি আছে। এই গাঁয়ের নাম খুঁকরিডিহি। 

        সুবর্ণরেখা এখানে চওড়া নয়, তার উপর নানা সাইজের নানা আকৃতির উপলখণ্ডের মধ্যে দিয়ে ছলছল হুলহুল করে বয়ে চলেছে তার স্বচ্ছ নীল জল। এরকম নদী আমি প্রথমবার দেখছি তাই ভয় ও রোমাঞ্চ জাগল আমার। যেন ভয়ংকর সাদা সাদা পাথুরে-দাঁত বের করে মোহময়ী কাকলিতে চাপাহাসি হাসছে সে। কোথাও দ'এর মধ্যে ঘূর্ণাবর্ত, জল ঘুরে ঘুরে হারিয়ে যাচ্ছে বিশাল পাথরের আড়ালে। কোথাও সাদা সুউচ্চ ছুঁচালো বেলেপাথরের সারি সারি কুমিরদাঁত। 

তারই মধ্যে বাঁশ আর কাঠের পাটাতন দিয়ে একপাথর থেকে আরেক পাথরের মধ্যে পারাপারের ব্যবস্থা। মাথায় বোঝা নিয়ে দিব্যি কালো-কুলো মেয়ে-মরদের দল, সাথে কাঁখে বাচ্চা, অবলীলায় পেরিয়ে যাচ্ছে সেই ছাড়া ছাড়া, টুকরো টুকরো সাঁকো। বর্ষায় এখানে নৌকো চলে। 

নদীর ওপারে তটভূমির অনতিপর থেকেই একটা প্রাগৈতিহাসিক ঘুমন্ত ডাইনোসরের মতো বনভূমিছাওয়া পাহাড় শুয়ে আছে।ওর মাঝখানের গিরিপথ দিয়েই আমাদের যেতে হবে। ছোট ছোট কয়েকটি পাহাড় পেরোনোর পর শুরু হল লালধূলোর চড়াই-উতরাই ঘাটিপথ। ঠাকুরাণ পাহাড়ের ঘাটি। অনতিদূরেই নীলাভ ঠাকুরানীর বোঙ্গাবুরুর চূড়া।   

সাত-আট কিলোমিটার হাঁটার পর একটা পাহাড়ি ঝোরার কাছে থামলাম আমরা। এখানে বিশ্রাম। অসিতদার প্রিয় ফল আমলকি।কয়েকটা পেড়ে এনে আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলেন।  আমাকে চিনিয়ে দিচ্ছেন কোনটা কোন গাছ। কোন ফলের কী গুনাগুন।

                                      

          জঙ্গলের ভেতর থেকে টুনটুন ঠুনঠুন ঠরর্ ঠরর্ করে গবাদি পশুদের গলায় বাঁধা ঠরকা বাজছে। কোন রাখাল বোধহয় গরুছাগল নিয়ে বনেপাহাড়ে চরিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। ঠরকা এক অনুপম দেহাতি আবিষ্কার। বাঁশ বা কাঠের মদ্যিখানটা ফাঁকা করে,দু'দিকে দুটো কাঠের ঠনকা ঝুলিয়ে বানানো হয়। এই ঠনকাগুলি খুব নিখুঁত ও গোল করে পালিশ করতে হয়, না হলে কাঠির আগায় বলটির মধ্যে শিরালি থাকলে আওয়াজ টালখেয়ে যেতে পারে। তাই ঠনকা নিটোল হতে হয়। পশুরা তো আর গান ভেবে এগুলো বাজায় না। রাখাল রা তাদের গলায় ঝুলিয়ে বাজিয়ে নেয়। গরুছাগলভেড়াগুলোও হারালো না, আর তাদের তৈরি করা যন্ত্রের বাদ্যও তাদের সন্তোষ হয়ে, কানের চারপাশে, প্রকৃতির মহার্ঘ্য হয়ে বলতে থাকে, আমি আছি,আমি আছি, আমি কান্ট, আমি হেগেল, আমি তত্বমসি, আমিই সঙ্গতের গোড়া, সঙ্গীতেরও। আমাকে ভুলে কতদূর যাবে যাও, ডালে যাও, পাতায় যাও, লা-পতা'য় যাও। তারপর ফিরে তো আসতেই হবে আমার কাছে!       

          নিস্তব্ধ জঙ্গলে পশুদের গলায় বাঁধা এই ঠরকার শব্দ শুনে আমার ছন্দের কান পাকা হয়। আফশোস, আমাদের ভারতীয় সঙ্গীতজগত এই সর্বময় প্রাগৈতিহাসিক গ্রামীণ বাদ্যকে কোনভাবেই ব্যবহার করতে পারল না। আসলে আমাদের মেট্রোপলিশড কলকাতা-বোম্বে-মাদ্রাজওয়ালা সঙ্গীতকারগন অনেক বিখ্যাত কাজ করেছেন লোকসঙ্গীত নিয়ে। তাঁরা আমার নমস্য। প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিবর্গ।                                           

কিন্তু আমি যদি সঙ্গীতকার হতাম, তাহলে এই ঠরকা'র বিশেষায়িত  বোল আর চাল গুলিকে ব্যবহার করতাম সঙ্গত হিসেবে। তাল হিসেবে। বিট হিসেবে।                                     

সুমন চট্টোপাধ্যায় বা কবীর সুমনও এটাকে ব্যবহার করতে পারলেন না, রাহল দেব বর্মন, সলিল চৌধুরী, বা শচীনকর্তা, এরা আসলেই গ্রামে বসে কাজ করলেন না তো, শহরে বসে গ্রামের সুর নিয়ে বিখ্যাত হলেন। 

           আসলে প্রত্যন্ত গাঁয়ের কথা প্রান্তিকেই থেকে যায়। 

          শহরে বিকল্প আছে, গ্রামে বিকল্প নাই। 

           এখানে ইন্সট্রুমেন্ট তোমাকে সাহায্য করবে না। গাছ থেকে পাতা পড়ার শব্দ, হাওয়ায় তালপাতার ফেঁসে যাওয়ার খ্যাঁস খ্যাঁস শব্দ, বড়োগাছ পেঁচিয়ে লতার বেড়ে ওঠার শব্দ। জঙ্গলের গহীনে ঠরকার শব্দ, এসবই সহজ সঙ্গীত। এসবই সহজ লয়তাল।অবশ্য পরের দিকে কেউ কেউ ব্যবহার করেছেন শুনেছি, আমি জানি না। একজীবনে সব জানা-শোনা সম্ভব হলনা আমার। সামান্য জানা নিয়েই মাঝে মাঝে অহংকার করে ফেলি। তাই সে সবের শাস্তিও পাই, এটা বুঝতে পারি। তখন কষ্ট হয়, অনুতাপ হয়। অনুতাপের কষ্ট যে কী ভয়ঙ্কর, সেটা যার হয়, তিনিই বোঝেন।           

   

 অসিতদা মানুষটা সহজ ছিলেন না। বড়ো ছিলেন। বড়ো মানুষেরা কখনো সহজ কি? অথচ তার মতো সহজ খোলামেলা মানুষ আমি তখনো পাইনি কাউকে। মার্কসবাদী-চরিত্রে কঠোর, অথচ বইপড়া-মার্কসবাদীদেরকে দু'চক্ষে দেখতে পারতেননা।  গেঁয়ো, চাষা, মানুষ ছাড়া আর কিছু বুঝবো না গোছের একটা গোঁয়ার্তুমি ছিল অসিতদার মধ্যে। 

         বলতেন, হঠাৎই, এখানে এসে তোমার কেমন মনে হচ্ছে? তুমি থাকতে পারবে তো?

তোমরা আসলে বিপ্লব নামের এক কাল্পনিক অ্যাডভেঞ্চারকে আঁকড়ে এসেছো। দু'দিন না খেতে পেলেই পালাবে। 

           আমার ঘরেও তো একই অবস্থা দাদা। তুমি তো জানো। আমি ঘরে না থাকলে মা-দাদা আমার খাবারটা খেতে পাবে।আমি ফিরে গেলেই তাদের খাবারের থেকে ভাগ বসবে। 

এসব বলতাম আর আমার কান্না পেত। দাদা, এপিলেপ্সি আক্রান্ত দাদা আমার, না জানি মা'কে না বলেই কোথায় হারিয়ে যেত। পথহারা কাদামাখা অভুক্ত হাড়জিরজিরে দাদাকে অচেতন্য অবস্থায় কতবার ট্রলিভ্যানে করে তুলে এনেছি ভিনগাঁয়ের ঝোপজঙ্গল থেকে। 

          এইসব কথা উনি জানতেন। তবু পরখ করতেন। আর একটা কথা বলেছিলেন,আমি তোমার সাথে কাজ করছি,তাই বলে তোমার সাথে চিরকাল থাকবো এটা ভেবো না।আমি না থাকলে আমার কাজটা যেন থাকে,এটা তোমার  দায়িত্ব। 

          সেই কাজ আমি রাখতে পারিনি। অকৃতজ্ঞতার চূড়ান্ত নমুনা আমি রেখেছি অসিতদা। অসিতদাকে সিপিএমের হার্মাদরা মেরে ফেলে ২০০৩ সালে। সে কথায় পরে আসব।

  

          যাইহোক, ফিরে যাই গুড়াবান্ধায়। এই এলাকাটা বাংরিপোসির মতো ঘনসন্নিবদ্ধ পাহাড়ের দেশ  নয়, মাঝে মাঝেই কৃষিজমির পরিমানের আধিক্য চোখে পড়ে। গ্রামগুলি অবশ্য পাহাড়ের কোল ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে। হয়তো সুবর্ণরেখার অববাহিকা বলেই কৃষিজমির পরিমাণ বেশি। এই সব জমি বৃটিশরা আসার আগে ধল রাজাদের দেওয়ানী জমিদারীর আওতায় ছিল। ধল রাজাদের নাম থেকেই এলাকার নাম হয় ধলভূম। আর তাদের রাজধানীর নাম ধলভূমগড়। সে রাজপ্রাসাদের ভগ্নাবশেষ আজও আছে, হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষিত। ধল রাজারা বিনাযুদ্ধে প্রথমে বৃটিশদের বশ্যতা স্বীকার করেনি। এখানকার মানুষ ও রাজাকেও বৃটিশরা চুয়াড় হিসেবে উল্লেখ করেছিল। রাজা জগন্নাথ সিংহদেব ধল বৃটিশদের বিরুদ্ধে ১৭৬৯ খ্রীস্টাব্দে প্রথম   প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। এই বিদ্রোহ দিয়েই চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হয়। সমগ্র জঙ্গলমহল জুড়ে(পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বা তৎকালীন মানভুম, ঝাড়গ্রাম, শিখরভূম, সমগ্র সিংভূম)  চলেছিল  ভীষণ লড়াই। যা ইতিহাসে "চুয়াড় বিদ্রোহ"  নামে বিখ্যাত হয়ে আছে।ঘাটালের গোবর্ধন দিকপতি, গড়বেতার অচল সিং,রাইপুর- অম্বিকানগরের দুর্জন সিংহ,মেদিনীপুর নাড়াজোলের রানী শিরোমণি মহাত্মাগন এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। এই ইতিহাস অসিতদা'র মুখে শুনতে শুনতে চলেছি পাহাড়িবনের পথ। তারপর  এখানের মানুষের মনে, লোকগাথায়, গানে, সাহিত্যে ধলরাজাদের বীরত্বের কথা বহুবার শুনেছি।                                                  

           এই চুয়াড়ধন্য ধলভূমের মাটি দু'পায়ে মাখতে মাখতে সেদিন আমরা প্রায় বিশ কলোমিটার হেঁটে পৌঁছলাম গুড়াবান্ধায়।     এখানে যাঁর বাড়িতে আমরা উঠলাম তাঁর নাম কালীচরণ মাহাতো। একসময়ের ঝাড়খণ্ড পার্টির নেতা ছিলেন, পরে নকশালদের সংস্পর্শে এসেছেন। এখন আমাদের কৃষক সমিতির ব্যানারে কাজ করেন। এখানের সমস্ত যোগাযোগই তাঁরই উদ্যোগে গড়ে ওঠা।সামান্য কিছু জমির মালিক আর তার দুটি ছেলেই মুসাবনীর খনি অঞ্চলে কনট্রাকটরের আন্ডারে মজদুরি করে।এখানকার অনেক বাড়ির ছেলেরাই মুসাবনি বা গুরুমহিষানি- বাদামপাহাড়ের বিভিন্নভাবে রোজকারের চেষ্টা করে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন পোটকার এক সম্পন্ন পরিবারে। এখন তিনি ঝাড়া হাত-পায়ে চাষের কাজ আর পার্টির কাজ করে বেড়ান। পাহাড়-জঙ্গল ঢুঁড়ে নকশাল করার লোক জোগাড় করাই তাঁর কাজ। 

     

             ডুমারিয়ায় যে কটা দিন ছিলাম, কালীদার হাত ধরেই বিভিন্ন গ্রামে গিয়েছি। নানা মানুষের সংস্পর্শে এসেছি। তাদের কথাই বলব এবার....

      

                                                                                                                                                      ক্রমশঃ 

 

6 comments:

  1. ঠিক আছে। বিপ্লবের আত্মজীবনী বা জীবন লিখে ফেল। চালিয়ে যা।

    ReplyDelete
  2. ঠিক আছে। বিপ্লবের আত্মজীবনী বা জীবন লিখে ফেল। চালিয়ে যা।

    ReplyDelete
  3. ঠিক আছে। বিপ্লবের আত্মজীবনী বা জীবন লিখে ফেল। চালিয়ে যা।

    ReplyDelete
  4. যতদিন ওই মানুষগুলো থাকবে ওই জায়গাগুলো থাকবে তার অনন্তকাল পরেও এই লেখা রয়ে যাবে

    ReplyDelete
  5. এ লেখা লেখার পিছনে আমার ভূমিকা ভুলে যাস না ভাই। তোর এই জীবনের বা সফরে আমাকেও কিছু আয়োজনে বলা ভালো রাত বিরেতে তোর অত্যাচারও সহ্য করতে হয়েছে😁😁😁। কৌতুক করলাম 😁।


    এরপর সিরিয়াস -যতো এগোচ্ছে এলেখা ততোই আগ্রহী করে তুলছে। সেই সঙ্গে তোর হাতের গদ্যগুন।
    ইনজিরিতে কি যেন বলে - বেস্টো অফো লাকো 😁

    ReplyDelete
  6. এ লেখা লেখার পিছনে আমার ভূমিকা ভুলে যাস না ভাই। তোর এই জীবনের বা সফরে আমাকেও কিছু আয়োজনে বলা ভালো রাত বিরেতে তোর অত্যাচারও সহ্য করতে হয়েছে😁😁😁। কৌতুক করলাম 😁।


    এরপর সিরিয়াস -যতো এগোচ্ছে এলেখা ততোই আগ্রহী করে তুলছে। সেই সঙ্গে তোর হাতের গদ্যগুন।
    ইনজিরিতে কি যেন বলে - বেস্টো অফো লাকো 😁

    ReplyDelete