বাক্‌ ১৪৪ ।। সাজ্জাদ সাঈফ



একদিন

এইবেলা সুর করে নিরালা বিকাল নামে
মাটি আর ইরিধানে, মৃদঙ্গবর্ণনা;
পুশকুনি ঢেউ ভেঙে, দীঘল কিনারে সাধে
জুনের গোধূলি আর নিবিড় গোলাপ-ছায়া; 

এই প্রেম-প্রীতি-হেম, দীপালির আয়োজনে
ভেসে গেছে সাদা মেঘ, হাওয়া-বন্ধন মেনে-
এইবেলা বুকে লাগে, তোমায় ডাকার তাড়া
পিছু নেয় স্মৃতি, ঘাস, হরিতকী-বিল ছোঁয়া;
একদিন গাঙে ভেসে, সমস্ত নীলিমা এসে
গলা বেয়ে, নেয়ে-ধেয়ে, গড়িয়ে নামবে বুকে?

একদিন দেখো তুমি, সবার চোখের ধারা
দ্বিতল ঝড়ের মুখে, মেঘ-জল-বাজ ভরা
এই গাছে-শাখে আর ওই ভিড় সন্ন্যাসে
ধাক্কা ও জোড়া খুরে, বেদম আঘাত ঘেঁষে
মুখ থুবড়ে সবই, ঝরে পড়ে যেতে দেখে
ফেলে রেখে চলে যাবো, আমিও একাই হেঁটে!

কোনো কোনো বেলা রোদে, আসবে তোমার স্মৃতি
কোনো কোনো দিন শেষে, ভরাট নদীর ধারে;
দেখো সেইদিকে চেয়ে, তাকাবো না আর ফিরে! 
আহাজারি কিছু তুমি বুঝতে পারছো, যূথী?





ভাষার চেহারা

একদিন মৃত্যুর কাছে গিয়ে বসি। 

আর দেখি চুপচাপ 
ঘুম-দ্বিধা-ক্লান্তির সাথে তার সম্পর্কের গ্রাফ
সমস্ত দেয়ালিকা-ধারা, ছিন্ন করে উজ্জ্বলতর-

একদিন, নিজেদের কাছাকাছি ওড়ে মেঘ
সর পড়ে যেন আবছা আকাশ চেয়ে; 

অশোক-বর্মের ন্যায় উচ্চতা নিয়ে স্বাধীন
পৃথিবীতে যত পাহাড়-প্রতিভা খাড়া 
পরমায়ু ততো নির্বিঘ্ন, ভাবো?

এখানে অসুখ এসে
বাসনাস্বত্বে বসে, খুঁটে খায় মানুষের আবছায়া;

এখানে শিমুলস্নায়ুর পাতা
সারাদিন, গানহীন, আজকাল!

এত জল চারধারে, এত খল হাসির ফোয়ারা
সব গান ধ্বনিহীন লাগে, নির্বোধ লাগে ভাষার চেহারা!





জবানবন্দি

নিজের জবানবন্দির কাছে এসে, বসে আছি আমি, চুপচাপ;

কাগজ দিয়ে নৌকা বানানো লোকটা, বৈঠা চালাতে না জানা লোকটা, কি বোকা!
অথচ ভাসমান ডিঙিতে করে, সে একা ভ্রমণ করে এসেছে বিপাশায়, একদম একা।

গোলাপের কাছে এসে দেখি, হাত কাঁপে দুর্বৃত্তের 
অথচ সময়চেরা কন্ঠকে দেখি, ধুলাবালি ঝেরে
ঘরে ঢুকে বসে আছে, খিল এঁটে;

বিচূর্ণ কাঁচের মতো, মানচিত্রে 
এক একটা গ্রাম, টুকরা হয়ে পড়ে আছে;
ধান ঠুকরে খাচ্ছে, ভাতশালিখ;

একটা সরীসৃপ এসে ঘাড় তুলে আমাকে দেখে;
অসংখ্য গাছের ভিতর দিয়ে একটা সরু আলোর রেখা 
ঢুকে যাচ্ছে বুকে, যেনো মায়ের আদর, আর যেনো 
হাতের ইশারা পেয়ে সারাপথ মশগুল, বনফুল!

কাছেই ঝর্নাধ্বনির নিচে, শতাব্দী জুড়ে
পবিত্র হচ্ছে পাথর- আর 'পরিত্রাণ', বহুভাষী এক পথ;
উল্লেখ করবার মতো একটি ভাষাকে, বেছে নিয়েছি আজ!

কিছুদূর ভরে আছে শাকফুল;
আর কিছু ইঙ্গিত নিয়ে জাহাজের ভেঁপু 
দূর থেকে অলৌকিক, ঘামবিন্দু সরিয়ে দিচ্ছে আকাশ;
প্রশ্ন করছে মেঘ, আর, কোনোটারই উত্তর না দিয়ে আমি
চুপ করে আছি-

বোকা বোকা চোখ তুলে 
এই সমাজ, এই ভেদবমি লুকানো সমাজতন্ত্রের মুখে
থুতু ছিটিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে, আমাদের জবানবন্দি!



3 comments:

  1. এই প্রেম-প্রীতি-হেম, দীপালির আয়োজনে
    ভেসে গেছে সাদা মেঘ, হাওয়া-বন্ধন মেনে-
    এইবেলা বুকে লাগে, তোমায় ডাকার তাড়া
    পিছু নেয় স্মৃতি, ঘাস, হরিতকী-বিল ছোঁয়া;

    এই ডাকের তাড়া সত্যি বুকে লাগে ভাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. শুভপাঠে অশেষ শুভেচ্ছা প্রিয়

      Delete
  2. একদম অন্যরকম কবিতা। খুব ভালো লাগল

    ReplyDelete