বাক্‌ ১৪৪ ।। বনমালী মাল



শূন্যপুরাণ

একটা কাঁচা পুষ্ট গোলাপ, একদলা জমাট কালো রক্ত, আর অনেকগুলি নারী-পুরুষ দল বেঁধে বসে আছে হাঁটুজল জমির আলে আবক্ষ পা ডুবিয়ে ওদের গা-মাথা মাড়িয়ে আমি প্রায় যাতায়াত করি নতুন পুকুরের ভেজা ভরপুর জরায়ুতে সঙ্গে থাকে লতার বেশে নরম পাংশুটে বিড়াল কোকিল ডাকলে সে বিষন্ন হয় না উপভোগের রাতে সে চুপ করে পড়ে থাকে, শূন্যতা যেন একদিন রক্তঝরনায় কাকভেজা ভিজেও সে অবিচল ছিল তার কুঠিতে বদ্ধ চোখ ফেরানো— অভিমানী বাঁশির সুর শুনে আমার আঙুল ওঠাপড়ায় মাতলে সে ক্রুদ্ধ চোখ ফেলে আমার আনমনা চোখে তারপর মাথা নাড়িয়ে অবিকল শুকনো পাতা হয়ে যায়
দিনের আলো ছড়ানো এক বাঁজা উপত্যকায় আরামের ঘুম নিচ্ছিল বিড়ালটি অন্ধকার কোণে টানটান লম্বা মুদ্রায় কান আর চোখের ভ্রূ সচেতন তবু নরম লোমে বশ করার চেষ্টায় কূপের থেকেও বেশি ধুলো মেখে আমার অসাবধানী গন্ধে উঠে দাঁড়িয়ে মায়াদৃষ্টি ফেলে গা ঝেড়ে ধুলো উড়িয়ে শুন্যেও শূন্যতা ছড়াতে চেষ্টা তার তারপর না-বলা না-কওয়া ঘেঁষে দাঁড়াল আমার দু’ পায়ে পালা করে এতদিন চোখে না পড়া, ভাবনা-বৃত্তের বাইরে থাকা সে সমস্ত দেহতল দিয়ে ভেতরে সেঁধিয়ে যায় চোরাস্রোতের মতো যেহেতু লতা, অবলম্বন পেয়ে তাই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে রাতদিন
          আলের ওপর ওরা দূর থেকে চেয়ে আশা করে এই বুঝি ওদের কাছে গিয়ে থামবে আমার বিড়াল, আমার ‘আমি’ গোলাপ পাপড়ি মেলে আয়তনে ছড়িয়ে পড়ে ঘাসের সঙ্গে কোনোরকমে বনিবনা করে হিমশৈল হয়ে ছিন্ন পাপ উঁকি দিচ্ছে ‘আমার রূপে আর লোভী করে তুলব না কাউকে’— কাঁচুমাচু মুখে তার এই স্বর সিঁড়ি ভেঙে তলিয়ে যায় একদলা রক্ত বর্ণ লুকিয়েছে কবেই ছদ্মবেশী সাজে তার আর্তি মাথা পেতে নিলে এখুনি আমার বিড়ালের হাতে খুন হবে একটি নারী আর গুণিতক পুরুষ পাথুরে ভাঁজগুলোকে পোষ মানিয়ে নারী আর পুরুষেরা ক্ষতে অভ্যস্ত হাত বোলাচ্ছে এখুনি সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারে ওরা ওরা এখুনি এঁটো গায়ে হাতজোড় করতে পারে শস্যদেবীর আগে কিংবা অলৌকিক আদেশ পেয়ে গলা খামচে ধরতে পারে উরুর সঙ্গে লেগে থাকা আর-এক উরুর এখন শুধু স্বমেহনের অনুষঙ্গ খুঁজতে বৃষ্টি হয়ে থাকা
বিড়ালটির মতো আমিও গেলাম নতুন পুকুরের পাশে আল দিয়েই মর্মভেদী হিংসা যেন লতাপাতা জড়ানো জরায়ুর খুব কাছে দাঁড়িয়ে দেখলাম দশদিকে চিলের চিহ্ন নেই কোথাও বিড়ালের প্রতি স্মিত হেসে স্বস্তির শ্বাস পড়ল ভগ্নদুতের মতো পথ আর বাকি নেই এখুনি শেষ হয়ে শুভেচ্ছা জানাবে সাবধানে নরম লতা সরিয়ে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছি বাইরের বাতাস শীতল করে দেয়নি জরায়ুর উষ্ণ নীড় পলে পলে অজর অক্ষয় মূর্তি রূপ নিয়েছে
প্রদোষ কালই শুভ সময় পাশ ফেরার ভাবনার পালে বসে এখুনি আমাকে ভাবতে হবে কচি খয়েরি পাতার বিন্যাস অন্ধকার নেমে আসছে মাটি আঁকড়ে বিড়ালটা আরও অন্ধকার খুঁজে নিতে মাটির গভীরে চালিয়ে দিচ্ছে জোড়া জোড়া ধারালো নখ জরায়ুর মুখ থেকে মুখ দেখাবে যে, তাকে গোপনে লালন করা কিংবা বিড়ালের মতো প্রস্ফুটিত পদ্ম করে তোলার বিকল্প আমাকে নরম উষ্ণ জরায়ুর পাশেও হিমশীতল করে তোলে
সন্ধ্যার সংকেতে তাকে মৃদু স্পর্শ আর নরম চুম্বন উৎসর্গ করে বাহুর মাঝে ভাসিয়ে রেখেছি উপরে একপাল নির্লিপ্ত তারা নীচে পাশাপাশি গোপন বাসের গর্ত ও বিড়ালের প্রখর দৃষ্টি আমি হাঁটু মুড়ে বসি আমার ভাবী পুরুষের বিকল্প বেছে নিতে


12 comments:

  1. সাংঘাতিক ভালো লেখা ভীষণ নিজস্বতা আছে

    ReplyDelete
  2. লেখাটি আমাকে বিস্মিত করল। বনমালী তোমার এই লেখা পড়ে মনে হল - তোমার কলম অনেক অনেক দূরে যাবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ স্যার। প্রণাম নেবেন।

      Delete
  3. চমৎকার লেখা।
    শব্দ ব্যবহার খুব ভালো।
    অনেক ভালোবাসা রইল।
    আরো অনেক লেখো।

    ReplyDelete
  4. ধন্যবাদ স্যার। প্রণাম নেবেন।

    ReplyDelete
  5. ভীষন,ভীষণ ভালো লেখা। তবে পত্রিকা সম্পাদক মনে হয় বাঁধা ছকের বাইরে বেরোতে নারাজ,তাই অন্য ন্যারেটিভ।

    ReplyDelete
  6. ভীষন,ভীষণ ভালো লেখা। তবে পত্রিকা সম্পাদক মনে হয় বাঁধা ছকের বাইরে বেরোতে নারাজ,তাই অন্য ন্যারেটিভ।

    ReplyDelete
  7. ভীষন,ভীষণ ভালো লেখা। তবে পত্রিকা সম্পাদক মনে হয় বাঁধা ছকের বাইরে বেরোতে নারাজ,তাই অন্য ন্যারেটিভ।

    ReplyDelete
  8. দুর্দান্ত চলন। বেশ অন্যরকম ন্যারেটিভ। খুব ভালো লাগল

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নেবেন।

      Delete