বাক্‌ ১৪৪ ।। রিগ্যান এসকান্দার



যতিচিহ্ন

মা মারা গেলে ছেলেবেলায় বাবা বলেছিল- তোর মা আকাশে আছে, জ্যোৎস্না হয়ে। আমি বিশ্বাস করেছিলাম। বিশ্বাস করেছিলাম - আকাশ তুমি জ্যোৎস্না লুকিয়ে রাখো শাড়ির আঁচলে।

এখন আমি বড় হয়ে গেছি। এখন আমি ওসব কথা আর বিশ্বাস করি না। এখন আমি বিশ্বাস করি- আমার মা কবিতা হয়ে গেছে। আকাশ তুমি এখন আমার কাছে কবিতা লেখার সাদা পৃষ্ঠা। মা যে কবিতাটা হয়ে তোমার শরীরে লেপ্টে আছে, যতিচিহ্নের মতো আমাকেও স্থান দাও সে কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তি। যেন বহু শতাব্দী পরও বিদগ্ধ কোনো পাঠক এসে আমার মায়ের কবিতাটা পাঠ করে যায়। 

আর পাঠের সময় - যতিচিহ্নের স্থানে স্থানে একটু বিশ্রাম নিতে যেয়ে যেন আমার কথাও মনে পড়ে তার। 



রং

আমার দাদিমা জন্মান্ধ ছিলেন।

দাদিমায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে লাস্ট ট্রিপের বাস ধরে আমি শহর থেকে ছুটে এলাম। এসে দেখি, যেন আমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করবেন বলে দাদিমা সাদা একটা কাফনের কাপড় পরে উঠনে শুয়ে আছেন। আমি শিউরে উঠি। আর ঠিক তখনই দাদিমা তার মৃত্যু শোকে শরীর হওয়া বাড়িভর্তি মানুষের সামনেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-

বিয়ের পর পরেছি রঙিন শাড়ি । আর তোর দাদার মৃত্যুর পর থেকে পরছি সাদা। শেষবার তুইও একটা সাদাই দিয়েছিলি। একটু বল তো সাদা আসলে দেখতে কেমন? কবরে যাওয়ার আগে রংটা চিনে যাই।

আমার দাদিমা জন্মান্ধ ছিলেন।



কথা

সত্য কথা, মিথ্যা কথা, মধুর কথা। কত কত কথা আছে আমাদের, এক জীবনে যা বলে শেষই হয় না।

কথা নিয়ে কথাকাটাকাটি।
কথা নিয়ে কথাচালাচালি।

মূলত কথা এক চমৎকার বহুমুখী শিল্প। আর শিল্পের মৃত্যু নেই বলেই হয়তো একদিন মুখের সব কথা পৃথিবীতে রেখে দিয়েই নিশ্চুপভাবে কবরে চলে যেতে হয় আমাদের। আমাদের কথাগুলো তখন খুঁজে নেয় নতুন কোনো বক্তার মুখ।

তাই প্রেম অথবা দ্রোহের কথা, যা বলার এখনই বলে নাও,
কথা দিলাম-শ্রোতা তো তুমি মৃত্যুর পরও হতে পারবে।

No comments:

Post a Comment