বাক্‌ ১৪৪ ।। বন্ধুসুন্দর পাল



পুষ্পাঞ্জলি

১.

কীভাবে এমন মুখচোরা হলে! খোঁড়া আলপিনের মতো দেওয়াল ভেদ করে দেখো আমায়, দিনান্তে কেমন একটু একটু করে অক্ষর ভেঙে ভাত বেড়ে দিচ্ছি তোমার মুখে । এভাবে যথেষ্ট নয়, তবু নুনের চেহারা নিয়ে পা ধুয়ে দিচ্ছি তোমার, এই গৈরিক সম্ভাষণ ছেড়ে কেন একা একা শিশিরে শরীর ডোবাও! জানো না, পুজোর ছলে যে কেউ তোমার থেকে ক্ষয়িষ্ণু আদায় করে নেবে! পালানোর পথ তুমি জানো না...

২.

মুনাফা বেড়েছে অন্তরে-বাহিরে। ছেঁড়া কাঁথা কলমিলতার মতো ঘিরে আছে, স্নায়ুজল টপকে ঘামের কাছে যাচ্ছি। সে কি আমার ঘ্রাণের জন্য অপেক্ষা করছে! জানি না। মাটির তাওয়ায় দুমুঠো দুঃখগুলো সেঁকে যে রুটি বানাও, তার খিদে কে তৈরি করে দেবে বলো! শব্দের সঙ্গে শব্দের ঝগড়া হলে, তারা কি এক ছাদের নীচে আলাদা আলাদা ভাত বেড়ে খাবে ! প্রার্থনা থেকে পা  সরিয়ে নাও এবার তুমি। দেখো, কবিতার কালো দিঘির মতো যার শরীর, তবু তার বুকে পদ্ম ফোটেনি! তুমি তার থেকে পুষ্পাঞ্জলি নিও না ওমন করে...

৩.

শরীরের সিঁধ কেটে তোমাকে নিতে এসেছি। চুপচাপ থেকো না, সাড়া দাও। দেখো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও তোমার খিদের কাছে হাত পাতিনি,‌‌ ইস্কুল বালিকার ধর্ষণের পরও তোমার কাছে শাস্তির দাবি চাইনি, ভিক্ষুকের ঝুলিতে চারাগাছ রোপন করতে বলিনি, রাষ্ট্রের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি কক্ষনো,  হে নাথ এবার শরীর খুলে দেখাও কীভাবে অক্ষরের পচনে তুমি আঁশটে গন্ধ ছড়াও কুয়োতলায় । আমি যার সঙ্গে গামছা পরে শব্দ মেখে  সমুদ্র স্নানে গিয়েছিলাম, তুমি তার খবর এনে দাও...

৪.

মাটির পুতুলের বিয়ে দিচ্ছে উঠোনে ছোট্ট কুসুম । তার রান্নাঘরে কত কত আয়োজন, মাটির ভাত, মাটির ডাল, মাটির আলুভাজা, মাটির মাছ, মাটির মিষ্টি আরও কতো কী! আমি সন্দিহান হয়ে দেখছি, শুধু দেখছি। এমন ভাবে কেউ কক্ষনো ভোরের নরম কোলে তুলে নেয়নি! আমাকে ঠাঁই দিয়েছে যে পাষাণী, তুমি তার সব কাঠিন্য তুলে নাও। আলো দাও। আলো দিতে দিতে আমার চোখ অন্ধ করে দাও। আমার অন্ধ অক্ষর তোমার কাছে সমর্পণ করেছি জেনে তবুও তুমি মুখ ফিরিয়ে নিলে...

৫.

বেল ফুলের মালা খোঁপায় গুঁজে কনে'র সামনে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন! আমি ভিরমি খেয়ে পড়ছি। তোমার লজ্জার বেহায়াপনা আমাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না। তোমার সিঁথি জুড়ে যে লাল লাল অক্ষর নিষিদ্ধ পল্লীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেন মনে হয় সব আমার দেওয়া সরণি। তবু পথ খুঁজে পাচ্ছি না! তোমাকে পুজো করার ছলে, আড়ালে ডেকে তোমার সব সাজ নষ্ট করে দিতে মন চাইছে। কারণ, যে অক্ষর তুমি আমাকে দিয়েছিলে সন্দেহের বশে, তারা আমায় তোমাকেই নষ্ট করতে শিখিয়েছিল...


6 comments:

  1. অসাধারণ লেখাগুলো! কুর্নিশ আপনাকে ।❤️❤️❤️

    ReplyDelete