বাক্‌ ১৪৪ ।। ব্যক্তিগত দর্শন : বাক্ স্বাধীনতা— ৪র্থ- পর্ব ।। শুভদীপ নায়ক



যুগের ও সময়ের বদল ঘটছে, সভ্যতাও ধীরে ধীরে বদলে ফেলছে নিজেকে । বিজ্ঞান একইসঙ্গে জীবনদায়ী ওষুধ ও মরণাস্ত্রের মতো পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে । এমন একটা সময়ে আমার জন্ম হল যার মাত্র চার-পাঁচ দশক আগেই জাপানে দুটো শহর ঝলসে গিয়েছে । বিশ্বায়নের মধ্যেই যখন একজন শিশুর জন্ম হয়, তখন সে বড় হতে গিয়ে সভ্যতা থেকে সর্বপ্রথম যে শিক্ষা পায়, তা হল বিনিময়ের শিক্ষা । অথচ সে বই পড়ে জানতে পারে তার জন্মের ঠিক আগের শতকেই শিক্ষা ও লেখালিখি ছিল একটা সভ্যতার নিঃশর্ত প্রতিভার বিকাশ, এক মহত্তম সূর্যের পুনঃপুনঃ জাগরণ কবি ও শিল্পীসত্তার মধ্যে দিয়ে । এই দুই শতকের বিরাট ব্যবধানের মাঝে শুধু দাঁড়িয়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ । যিনি উনিশ শতকের শেষ থেকে যাত্রা করেন বিশ শতকের প্রায় মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।

সেই যুগের অবসান ঘটল স্বাধীনতার কিছু বছর আগেই । স্বাধীনতা হাতে পাওয়ামাত্র আমরা গান্ধিজীকে হারালাম । তারপর ধীরে ধীরে যে ব্যক্তিত্বরা দেশ ও কাল ব্যাপী আমাদের ভারতবর্ষকে বিশ্বের শীর্ষস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন, আমরা তাঁদের অনুসরণ করা শুরু করলাম, কিন্তু আমরা নিজেরা জীবনে কিছু কাজ করার জন্য নিজেদের আত্মাকে নিয়োজিত করলাম না । বিশেষত বাঙালিরা, যাঁরা বিগত দু'শো বছরেরও অধিক সময় ধরে ইংরাজি চর্চা করে নিজেদের একটা মেধাজীবী জাতিতে পরিণত করতে চাইলেন, তাঁরা নিজেদের মাতৃভাষার দুর্বলতাকে সংস্কারই করলেন না রবীন্দ্রপরবর্তী সময়গুলোতে । যেসব সমস্ত বাঙালি সেই গভীর কাজে হাত দিলেন, তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল সমস্ত বাঙালিসমাজ । বাঙালিদের আধুনিকতার ধারণা, সাহিত্য আন্দোলনের ভূমিকা যে তাদেরই ইতিহাসে চাপা পড়ে আছে, সে কথা তারা প্রায় ভুলতে বসলেন । তারা ফরাসিদের মেধার নিচে নিজেদের লেখার সত্তাকে চাপা দিতে শুরু করলেন । অথচ জীবননান্দ থেকে শুরু করে অনেকেই উত্তর-অধুনিক কবিতা, কাব্যচর্চা করেছেন । নিদেনপক্ষে বিশ্বায়নের পর বাঙালি এটা কিছুতেই ভাবতে পারে না, তাদের মাতৃভাষায় রদাঁ, সার্ত্র, দেলুজ কিংবা দেরিদার মতো কোনও ইন্টেলেকচুয়ালের জন্ম হতে পারে । কিংবা মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মতো একজন লেখক শুধুমাত্র গদ্যের জীবনীশক্তি নিয়ে জয়েসের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে । এটা আমাদের বাঙালিজীবনের একটা সংকীর্ণতা । আমাদের বাঙালি কৌমসমাজের তৈরি করা একধরণের অলিখিত আইন, যা বাঙালিকে দীর্ঘকাল ধরে শিখিয়েছে 'দ্যাস কপিটাল' অথবা 'কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টো'-র পাশে 'বৈষ্ণব পদাবলী' রাখা যাবে না । এটাই সেই মেকী আধুনিকতা, যা ভক্তি ও মেধার ভিতরে অনৈতিক প্রাচীর তৈরি করে দিয়েছে রবীন্দ্রপরবর্তী যুগের সমাজ ও সাহিত্যতে । আমরা আজও একটি বাংলা কবিতায় খুঁজে ফিরি ফরাসি উপনিবেশের ছায়া, মর্ডানিজমের ধারণা । কেননা, আমরা চাই শিল্পের ভিতরে বেঁচে থাকুক বিশ্ব-ঔপনিবেশিকতা । যাতে তা বাঙালির আলোচনার টেবিলে কফি কিংবা মদের যোগ্য হয়ে ওঠে । আমরা শিল্পকে স্বতন্ত্র ও কালোত্তীর্ণের দৃষ্টিতে বিচার করতে শিখিনি । জ্ঞান ও গরিমার তত্ত্ব বহনের দায় যে শিল্পের নেই, সৃষ্টির পথ যে আমরা কেউই নির্ধারণ করে দিতে পারি না, সেই বোধটুকু বোধহয় হারিয়ে ফেলেছি আমরা । সৃষ্টি নিজের খেয়ালে গতি নেয়, বাঁক নেয়--- সম্ভবত এই সত্যটা মানতেও নারাজ উত্তর আধুনিক সময়ের বাঙালিরা । ইউরোপের দর্শনে গড়ে ওঠা অাধুনিক বাঙালিরা বিশ শতকেই  ছিন্ন হয়ে পড়ল নিজেদের সংস্কৃতির মূল ধারণা থেকে । অপরপক্ষে তাদের বিশ্বসাহিত্যের ভাবধারাও সম্পূর্ণ হল না । তারা সার্ত্রকে বাদও দিল না, সম্পূর্ণও জানল না । কম্যুনিজমকে সোভিয়েতের বাইরে দেখতে শিখল না, সক্রেটিস-প্লেটো-অ্যারিস্টটল কর্তৃক গ্রিক দর্শনকে রেখে দিল তাত্ত্বিক ধারণার অার্দশগত দূরত্বে । তারা রদাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করল বিবেকানন্দকে সম্পূর্ণ না জেনেই।

ঠিক এই ভিত্তিহীন সমাজ ব্যবস্থায় একজন শিশুর জন্ম হল, যার জন্মের জন্য অপেক্ষা করছিল সময় নিজেই । যে ছুটবে অনন্তের মধ্যে দিয়ে, যাকে চিনতে ভুল করবে তার সময়ের মানুষেরা । যে শিশু বড় হবে আর্টের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে । যে শিশু খোঁজ করবে সমস্ত অবদান গৃহিত হওয়ার পরেও একুশ শতকে নতুন করে কোনও অভ্যুত্থানের প্রয়োজন আছে কি না ! যার কাছে লেখা হবে সেই দীর্ঘকালীন কর্তব্য যার মধ্যে দিয়ে শতকের সমস্ত সৃষ্টিগুলো যাতয়াত করবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে । যে শিশু বড় হয়ে তাঁর সমসাময়িক লিখতে আসা মানুষগুলোকে জানাবে, চিন্তা হল সেই আর্ট যা একজন গভীর লেখকের থাকা চাই । কেননা, বাস্তববোধের ধারণা খুব একটা দুঃসাহসিক অর্জন নয় লেখকের চরিত্রের পক্ষে । বাস্তববোধের ধারণা সে তাঁর পারিপার্শ্বিক জগৎ থেকে সহজেই পায় । কিন্তু কল্পনা হল তাঁর সেই মৌলিক বিষয়, তাঁর সেই অনবদ্য কাজ, যা তাঁর আগে কেউ তাঁর মতো করে ভাবেনি, তাঁর পরেও কেউ তাঁর মতো করে ভাববে না । তাঁর ইন্টেলেকচুয়ালিটির কাজ হবে সেই কল্পনাকে যুক্তির নৌকোয় ভাসিয়ে বাস্তবের ফেরিঘাটে বয়ে আনা এবং একটা জাতিকে এই সত্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো যে মৌলিকতার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে যে বাস্তববর্জিত দ্বন্দ্ব থাকে, তা নিছক কল্পনা নয়, তা হল এক অনাবিষ্কৃত সত্য, বাস্তব যা ছুঁতে পারেনি, শিল্পী আজীবন তাই-ই স্পর্শ করতে চেয়েছেন । জীবনের সেই গূঢ়তম দিক, যার ওপর আলো ফেলা, রঙ দেওয়া, লিখতে আসা সমস্ত মানুষের প্রায় কর্তব্য, তা থেকে সরে দাঁড়ালেন বর্তমান সময়ের লেখক-সমাজের একাংশ । যাঁরা প্রায় একইসঙ্গে হারালেন খ্যাতি ও মেধার কর্তব্য, এবং আশ্রয় নিলেন রাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া জনপ্রিয়তার ছাতার নিচে । বাঙালিদের উত্তর আধুনিক সময়ের বুদ্ধিজীবী হলেন এঁরা । আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে সমাজে শিশুকাল থেকে রবীন্দ্রনাথকে পড়ানো হয়, বিবেকানন্দের আদর্শকে যুবসম্প্রদায়ের ভিত্তি হিসাবে তুলে ধরা হয়, স্কুলের গণ্ডি ডিঙিয়ে যে সমাজে একজন কিশোর ভোটাধিকারের যোগ্য হওয়ার পূর্বেই কার্ল মাক্স পড়ে নেয়, তেমন একটি সমাজে নতুন করে বুদ্ধিজীবীর কী প্রয়োজন থাকতে পারে শুধুমাত্র বাঙালির মধ্যমেধাকে শাসন করা ছাড়া ? কিংবা মধ্যমেধার ভিতরে নিজেকে অাধুনিকতায় জনপ্রিয় করে তোলা ছাড়া ? উনিশ শতকে বাংলায় 'বুদ্ধিজীবী' বলে কোনও কথার প্রচলন ছিল না । ছিল 'দিশারী' বা 'কাণ্ডারী', ছিল সেই সব ব্যক্তিত্ব যাঁরা বাঙালি মায়ের গর্ভেই জন্মেছেন, পরাধীন ভারতবর্ষের বুকে ইংরাজি শিখেছেন, কিন্তু মাতৃভাষায় রচনা করে গেছেন তাঁদের যাবতীয় লেখালিখি । বঙ্কিমচন্দ্র চাইলে 'Rajmohan's Wife'-র পরবর্তী লেখাগুলো ইংরাজিতেই লিখতে পরতেন । কিংবা 'মেঘনাদবদ কাব্য' মাইকেল বাংলাতে নাও লিখতে পারতেন । কিন্তু আমরা জানি তেমনটা হল না । ব্যক্তিত্বের ধারণা যে শুধুমাত্র একটা কারাগার, জনপ্রিয়তার মধ্যে দিয়ে নিজেকে যে জাতির পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় উত্তীর্ণ করা যায় না, সেই কথা সেই সময়ের বাঙালি তাঁর চিন্তা ও চর্চার মধ্যে দিয়ে বুঝেছিলেন । আধুনিকতা সেই চর্চাকে গ্রাস করেছে বিশ্বায়নের দরজা খুলে যেতেই।

সম্ভবত সাহিত্যের বিষয়ে আমি বিশুদ্ধতার পরিপন্থী, পিউরিটান নই । নিরন্তর চর্চা মানুষের শিল্পবোধের ক্লাসিসিজমকে অনেক বেশি গভীরে নিয়ে যায়, সেই অর্থে বলতে গেলে জনপ্রিয়তা মানুষকে পঙ্গু করে তোলে । কবি হিসাবে অন্যদের তুলনায় আমি অনেকবেশি আত্মঘাতী । আমার সমসাময়িক সময়ের কেউ যদি আমার কাব্যভাবনার বিরুদ্ধে না দাঁড়ায়, তবে শেষপর্যন্ত আমি নিজেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াব । কেননা, আমি সর্বদা নিজেকে প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ভূমিকাতে দেখতে চাই । আমি একটা প্রগতির চাকা যা গড়িয়ে যাচ্ছে বাঙালির আধুনিক প্রথা ও লেখালিখির ধারণাগুলোর উপর দিয়ে । নিজেকে নিয়ে আমি খুব একটা সুখী নই, স্বস্তিতে নই । সর্বদা ভাবি যা দিচ্ছি, তার চেয়েও গভীর কিছু দানের ক্ষমতা আমার মধ্যে রয়েছে । এবং চারপাশে লেখকসমাজ, কবিবন্ধুরা, পাঠককূল, চিন্তকরা আমাকে ত্যাগ ও গ্রহণের মধ্যে দিয়ে আমাকে একটা অবস্থান দিতে চাইছে, যা আমি নিতে চাইছি না কোনওমতেই । কেননা, আমি চাই নিজেকে ফেলে এগিয়ে যেতে । সেই এগনোর পথে জনপ্রিয়তা একটা বিরাট বাধা, আবার একটা সংকীর্ণ বৃত্তও যেখানে ধরে নেওয়া হয় লেখকটি জাতির মনের মতো সাহিত্যের জন্ম দেবে, এবং জাতির সত্যকে আড়ালে রাখবে যতদিন সে বাঁচবে।

কিন্তু কোথাও একটা ধ্রুবতারা জেগে বসে আছে, যার আলোতে একজন লেখক ও একজন চিন্তক, শিল্পী মানুষটি তাঁর জীবনের সেরা পথটিকে দেখতে পায় যেখানে তাঁকে যেতে হবে । যে পথটিতে যাবে বলেই তাঁর জন্ম হয়েছে, সৃষ্টির মধ্যে সেই পথটি সর্বদা তাঁর অপেক্ষায় থাকে । কবি শেলি তো পারতেন ওয়ার্ডসঅর্থের পথে হাঁটতে, কিংবা বায়রনের পথের সঙ্গে মিশে যেতে । কোলারিজের পথেও যদি শেলি যেতেন তা হলেই বা দোষের কী হত ? কিন্তু তিনি শেলি হলেন । শেলি হওয়াটাই তাঁর সেই পথ যার সন্ধান কোলারিজ বা ওয়ার্ডসঅর্থ কখনও পাননি । সম্ভবত বায়রনও পেতেন না । শেলি জানেন, কবির জীবন হল ক্লাসিক প্রতারণা । তিনি হাত চালালেন ওয়ার্ডসঅর্থের চেতনায়, পেড়ে আনলেন গ্রিক নাট্যকারদের, সৃষ্টি করলেন এমন কিছু সাহিত্য যা সৃষ্টির ইতিহাসে অমরত্বকে জাগিয়ে তুলল । শেলি মৃত্যুঞ্জয়ী হলেন মৃত্যুকে তার প্রাপ্য স্বীকৃতি দিয়েই । সময়ে পেরিয়ে গেল, যুগের অবসান হল, সভ্যতা ভেঙে নতুন সভ্যতার জন্ম হল, তবু শেলির সিংহাসন অটুট রইল । লেখার ক্ষেত্রে এই হল সেই বিপন্ন বিস্ময় যা আমার মধ্যে জেগেছিল শৈশবস্থা থেকেই । তিতুমির যেভাবে ইংরেজদের কামানের মুখে বাঁশের কেল্লা তৈরি করেছিলেন, এটা জানা সত্ত্বেও সেই কেল্লা নিমেষেই বারুদের গোলার সামনে ভেঙে পড়বে । তবু, বিরোধ যে আছে তার সমস্ত দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও, সেই চিহ্নটুকু ক্ষমতার চোখের সামনে তুলে ধরাটাই প্রকৃত বিপ্লবের সঙ্গে সংযুক্ত । আমি মনে করি সাহিত্য হল সেই সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রস্তুতি যেখানে অবসর ও বিনোদনের কোনও ভূমিকা নেই, আছে জীবনকে বাজি রেখে কিছু ছবি তুলে ধরার একটা অপরিহার্য প্রয়াস, যেখানে পৌঁছতে গেলে জন্মের অনেক আগে থেকে একজন কবিকে যাত্রা করতে হয় । জন্মটা তার কাছে একটা সুযোগ, মৃত্যুটা বড়জোর একটা বিরতি । সে তাঁর মহাকাব্যিক চেতনা নিয়ে ছাপিয়ে যেতে পারে নিজের মৃত্যুকেও । পেরিয়ে যেতে পারে আরও অনেকের মৃত্যুকেও।

এই একটা সময়, যেখানে আমি জন্মেছি । একটা সময় এমনও ছিল, যেখানে আমি ছিলাম না, মনে করা হচ্ছিল আমার জন্ম হবে । আবার একটা সময় এমনও আসবে, যেখানে আমার না থাকাটা ভীষণভাবে ভাবাবে মানুষকে । আমি একটা লোক, যাকে রাখা যাচ্ছে না কোনও মানচিত্রে, কোনও নক্সা ধরে যার চেতনায় পৌঁছানো যাচ্ছে না, লোকটা তেমনভাবে বইয়েরও প্রকাশ করছে না, অথচ কখনোই থাকতে পারছে না একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে । ফলে, এমন একটা মানুষকে নিয়ে সভ্যতার হয় অনেক কিছু করার থাকতে পারে, কিংবা কিছুই করার থাকবে না । কেননা, প্রায় সবকিছু আবিষ্কৃত হওয়ার পরেও জীবন এখনও আশ্চর্যের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে আছে । আমার বিশ্বাস এটা থাকবেও, কারণ বশ্যতা ব্যাপারটা জীবনের নীতি বিরুদ্ধ । মানুষ কি কখনও বলতে পারে জীবনের ঠিক কোন্ জায়গা থেকে সে জেগে উঠবে এবং আর সে ঘুমতে চাইবে না ? পারে বলতে ? পারে না । নদীর সমস্ত প্রবাহ নিম্মমুখী হলেও একটুকরো শ্যাওলা সেই স্রোতের বিপরীতে ভাসার চেষ্টা করে, যদি অন্যপথে কোনও বিমুগ্ধ বিস্ময় তার জন্য অপেক্ষা করে থাকে, সেই আশায়!

(চলবে)

6 comments:

  1. পড়েছি। ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  2. খুব জরুরি লেখা।
    মেধা আর যুক্তির সার্থক সমন্বয়।
    ভালোবাসা নেবেন আমার।

    ReplyDelete
  3. "...প্রায় সবকিছু আবিষ্কৃত হওয়ার পরেও জীবন এখনও আশ্চর্যের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে আছে।আমার বিশ্বাস এটা থাকবেও, কারণ বশ্যতা ব্যাপারটা জীবনের নীতি বিরুদ্ধ ।"
    খুব ভালো লাগলো লেখাটা।

    ReplyDelete
  4. খুব ভালো লাগল।

    ReplyDelete
  5. খুব ভালো লাগল।

    ReplyDelete
  6. "We are the hollow men / We are the stuffed men / Leaning together / Headpiece filled with a straw. Alas!"

    ১৯২৫ এ এলিয়ট লিখছেন এইসব পংক্তি। কবির দৃষ্টি মানুষের অবশেষ দেখে ফেলছেন একটা মহাযুদ্ধ শেষ হতে না হতেই। আর মাত্র দু দশক পর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ।
    যা একেবারেই আছড়ে ফেলবে মানুষী সত্তাকে। যেটুকু থাকবে তার প্রাণরসটকুর অন্তিম শুষে নেবে বিংশ শতকের আর ভয়ংকর আগ্রাসন বিশ্বায়ন যার গালভরা নাম। এভাবে শেকড়টাই অদৃশ্য হয়ে গেল আমাদের। ভারতচন্দ্র আর বৈষ্ণব পদাবলীর যে স্থান ও কালমাহাত্ম্য নিয়ে আমাদেরই হইহই করে ওঠার কথা ছিল সে বিষয়টা বিস্মৃতিপরায়ণ হলো মেন দের রক্তে আন্দোলিত হবার কথা নয়। ফলে হাহাকার করব আমরা, কিন্তু কিছু করে ওঠা যাবে বলে মনে হয়না। মানসভূমির নির্মাণটাই তছনছ হয়ে গেছে অনেক আগে।
    তবু এ গৌরবের ধন নিয়ে গলা চড়ালে ভাল লাগে,যে কোথাও কণ্ঠস্বর এখনো বেজে উঠছে। আর ফরাসী গন্ধ লাগানো নিয়ে ভেবে হবেটা কি, ফরাসীরা স্বয়ং যখন মার্কিন গন্ধ মেখে বুঁদ! বরং বৈষ্ণব পদাবলীর বিশ্বায়ন নিয়ে আমরা কিছু করে উঠতে পারলাম না, এ আমাদের অনেক গভীরের ব্যর্থতা।

    ReplyDelete