মনকেমনের কাব্য
কনটেন্ট অনেক
আছে। অনেকটা আছে, অনেকরকম আছে, অর্থাৎ বিচিত্র। বিচিত্র বললেই তার আগে আমরা চিত্র
জুড়ে নিয়ে 'চকরাবকরা রঙিন'- এর ভব্য রূপ ভেবে নিই। বৈচিত্র্য বলে বিচিত্রতা
বোঝাতে হয় তাই। যদিও এখানে দু'ভাবেই বলা যায়। বিচিত্র কনটেন্ট। মাঝে মাঝে ঝিলিক
দিয়ে উঠছে এক একটি অংশ। আর, সমগ্র বইটি জুড়ে ছেয়ে রয়েছে এক মনকেমন৷ বিষাদ না।
মনকেমন।
... পুজো এসে গেলো,তুমি কবে ফুটবে কুসুম।
আমাদের আজ
কেন্দ্রাতিগ চৈতন্য বলে কিছু জেগে নেই।
সিংদুয়ারের বৃদ্ধ সিংহ হয়ে গ্যাছে
বাবা ও মা। রাতে ঘুমোয় সীবনযন্ত্রের পাশেই। পুজো এসে গেলো বলে আমাদের ঘরে ঘরে আজ পরমান্নবাতাস।
স্পেনীয় জাহাজ ডুবে গেলো গত বর্ষার
জলে ভাসা ওপাড়ায়, আজকাল সেই সব জল লিখতে ইচ্ছে করে খুব।
বড়বাবুকে বলো, এইবার পুজোয় জল
সবুজ পাড়ের শাড়ি নোবো, খুব একলা একটা পুকুরের মতো শান্ত দোকান থেকে।
কুসুম,
কুসুম আমার ছাতিমগাছ, আমাদের ভাতের
হাঁড়িতে ফুলের গন্ধ হয়ে ফুটেছ কুসুম ? ...
ঝনঝন ঝনঝন বাজে
সেতার। অধিগত মস্তক ধরে নেয় রাগ রাগিণী, খেয়াল করে মিহি মীড়, সীমান্ত পেরিয়ে যেতে
চাওয়া কনশাস। দূর একলা মাঠে ঝুঁকে পড়েছে যে, দূরবীন তাক না করলে মনে হয় যেন মাঠে কিছু চকচক করতে দেখে পয়সা ভেবে
নিচু হয়েছে, আসলে হয়তো সে শস্যবীজ রোপণরতা। দূর থেকে শুধুমাত্র অবয়ব, পটে আকাশ
মাটি আর সবুজ, বড্ড ট্র্যাডিশনাল, নাগরিক চোখের এক আধটা স্কাইস্ক্র্যাপারের
তেষ্টা পায়।
কিছু পংক্তি সরিয়ে দেয়।পাঠককে তার নিবিষ্টতা থেকে
সরিয়ে নিয়ে যায়।
'একটি বালক শুধু একাকী দৌড়ে যায়
ঘুড়ির পিছনে।' বালক দৌড়োচ্ছে। আশেপাশের পংক্তিকে এই বাক্য কি সুতোয় বাঁধছে খেয়াল হয়
না, ছবিটি অন্যমনস্ক করে দেয়। চিত্রার্পিত অক্ষরসজ্জার উপর দৌড়ে যাচ্ছে এক বালক, তার
ভীষণ কোনো তাড়া নেই, ধীরও নয় সে, আকাশে ভেসে যাচ্ছে ঘুড়ি অথবা রাজার আদেশ। যদিও সে
একাই, আর কারো উপায় নেই ঘুড়িটি পাবার, তবু সে দৌড়োয়, হাওয়ার গতি ঘুড়িটিকে যেদিকে নিয়ে
যায়। না আর কিছু স্পষ্ট না, শুধু দোদুল্যমান ঘুড়ি যা হাওয়া কেটে ভেসে ভেসে নামছে আর
দৌড়ে যাওয়া বালক।
"দাঁড়ান, ঘুমের ওষুধ খেয়ে
আসি, অবশ্য খেলেই ঘুমবো, আই কান্ট কমিট। আনলার্ন করছি একটা দুপুরের পেয়ারাবাগান"
ঘুমের ওষুধ এ
আধুনিকতার অঙ্গ। খেয়ে না ঘুম হওয়াও। সেখানে আচমকা এক পেয়ারাবাগান, সেটা কোনো
দুপুরের। ছবিটা হঠাৎ সিপিয়া হয়ে যায়। কচি কষা পেয়ারা। নুন থাকতে পারে। একা একা
বালিকা, বা বালক। বিশ্ব এক খেলার উদ্যান। দুপুরেরা চুপচাপ পেরিয়ে যেতে চায়। গরম,
ঘুমোচ্ছে সবাই। বাইরে খেলার পৃথিবী। কিন্তু বেশ চুপচাপ, ফলে পৃথিবীটা পায়ের তলার
পাতার আওয়াজের মতো তপোবন এবং আবিষ্কার!
এবং সেটাকে আনলার্ন করা। এ আর এক অসমঞ্জস ব্যাপার। পাথরের খোদাই জলন্যাতা
দিয়ে মোছা হচ্ছে।
"লাইনের পাশে নয়ানজুলিতে
শাপলা কুঁড়ি এসেছে। ঠিক তখনই বাদুলে হাওয়ায় দেবীপুর সঙ্ঘশ্রীর পলিথিনের পর্দা উড়ে যায়,
বিষন্ন দাঁড়িয়ে থাকে দেবীর সংসার, পুত্র কন্যা সহ। এক মেটে। যেন অন্নহীন বস্ত্রহীন
বানভাসি মা।"
এমন। এবং
"... নৈমিত্তিক সঙেদের এই
বোম্বাচাকে হঠাৎ চোখে পড়ে যায় পাগল আর ভিখারিণীর সংসার।...
... সুগৃহিনীর নৈপুণ্যে ভিখারিনী
ভাঙা থালায় বেড়ে দেয় আস্তাকুঁড় ঘেঁটে আনা খাবারের শেষ, দোকানীদের দান। আগ্রহে থালাটাকে
আঁকড়ে ধরে পাগল। খেতে থাকে নিবিড় মনযোগে।...
...স্টেশনে সি.পি.আই.এম.এলের
প্রকাশ্য সম্মেলনের দেওয়াল লিখনে পিঠ দিয়ে বসে থাকে পাগল ও ভিখারিনী। পাগলের সামনে
ভাতের থালা, দুর্বোধ্য ভাষায় আদর। ভিখারিনী হাতে ধরে রেখেছে অস্ত্র আঁকা লালপতাকা,
তারও চোখে দুষ্পাঠ্য দাবী। কে জানে, একে হয়ত ভালোবাসা বলে। কিংবা বিপ্লব, যা জমে উঠে
একদিন বিস্ফোরণ হবে।"
নবান্ন মনে পড়ে
যায় না, কুঞ্জ? এভাবেই চোখের ওপর ইতিহাস জ্যান্ত ঘোরাফেরা করে।
অনেক পংক্তি আছে, যা তুলে আনা যায়। ধাক্কা দিচ্ছে
না, ঝাঁকিয়ে দিচ্ছে না। জানালার পাশে একা অন্যমনস্ক নারীর মতন বসে আছে লেখাগুলি। তাকে
খুঁজে নেওয়া পাঠকেরই দায়।
বাগানটা এদিকে।
হ্যাঁ ওইদিক দিয়ে পাবেন। না, কি কি আছে গিয়েই দেখবেন। আমি বলবোনা। হ্যাঁ আমি
দেখেছি। আমি সব বলে দিতে পারি। তা আপনার সঙ্গে মিলতে পারে, অন্যও হতে পারে। কিন্তু
আমি বললে আপনি মেলাতে চেষ্টা করবেন। আমি বলবোনা তাই। পাঠক, আপনি বাগানে বেড়াবেন,
আমি শুধু জানিয়ে দিচ্ছি, এদিক দিয়ে গিয়ে, এই কাছেই আপনি একটি বাগান পাবেন।
No comments:
Post a Comment