বাক্‌ ১৪৪ ।। মণিদীপা সেন

 

সেশন ১

 

 তুমি লেখার কী জানো হে?

হেহেহে ! লেখার আবার কী জানব? যা জানা নেই কারোর তাই লিখি তারপর লোকজন জানতে পারে এসবও লেখার ছিল!

 

এটা কী লিখেছ?  গল্প না গদ্য না কবিতা ?

আজ্ঞে স্বাধীনতা। 

 

আরে কী লেখো তাহলে?

কিছু না।

 

তবে যে শুনলাম লেখো?

লিখি না। ভাবনার বানান বুনি! 

 

কী বুনলে শোনাও তবে

আমি এইসব বুনেছি । ওইসবও বুনেছি। এরপর আমি কী বুনব জানিনা। হয়ত খানিকটা এইসব ও ওইসব মিলিয়ে সেইসব বুনব যা কেউ বোনেনি!

 

সোজা করে বলতে পারোনা?

আপনি অবস্থান বদলালে এটাই যে সোজা! একটু নড়াচড়া করুন। তবেই রাস্তা বদল, হাওয়াবদল হবে। বোঝাপড়া হবে। দেখবেন এই রাস্তায় নতুন আলো বসেছে। মাঝেমাঝে আসুন ঘুরতে, যেমন রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন! 

 

 

সেশন ২

 

বলুন কী দেখছেন?  

...সাদা দস্তানা পরা দুটো হাত নির্জীব মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। তার পেছনে ধোঁয়া, অন্ধকার আর আগুন!

 

আপনার কাছে পৃথিবীর  নিষ্ঠুরতম  দৃশ্য কি এটাই?

না।

 

তবে?

এক সুসজ্জিত ড্রয়িংরুমে, একটি কাঠের ফুলদানিতে একগোছা সতেজ ফুল! জলে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। 

 

দুটো মানুষ কখন একসাথে থাকতে পারে বা একে অপরকে কখনই ভুলতে পারে না বলে মনে হয় আপনার?  

যখন তাদের ইতিহাস মিলে যায় খানিকটা বা তারা একে অপরের ইতিহাসের সাথে  রিলেট করতে পারে। 

 

একজন অভিনেতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লাস পয়েন্ট কী হতে পারে?

তার চোখ আর ভুরুর ওঠাপড়া

 

আচ্ছা ধরুন আপনি একটি ছেলের সাথে দেখা করতে গেছেন। তার হাতে ফুল চকোলেট৷ সে আপনাকে এক বিখ্যাত রেস্তোঁরায় নিয়ে এসেছে নৈশভোজে। নিভু আলো। বাহারি পদ৷ কিছুদূরের কাঠের প্ল্যাটফর্মে এক তীক্ষ্ণ নাকের যুবক চোখ বুজে পিয়ানো বাজাচ্ছে। আপনার জন্য চেয়ার টেনে যথাযথ ম্যানারিজম পেশ করেছে ছেলেটি। আপনার সূক্ষ্ম প্রশংসা করেছে গোটা সময়টায়। আপনাকে হাসিয়েছে তার বুদ্ধিদীপ্ত কথায়। আপনার কী ছেলেটিকে পছন্দ হবে? 

 

নৈশভোজের শেষে আমি হঠাৎই উঠে দাঁড়াব। হেঁটে যাবো সেই কাঠের প্ল্যাটফর্মের দিকে। তীক্ষ্ণ নাকের যুবকের পিয়ানোর মাদকাসুর তখন সবে থেমেছে। সবার হাততালির মাঝে, যুবকের চিবুক ঈষৎ তুলে ধরে তার অপ্রস্তুত ঠোঁটে এক গভীর চুমু খাবো৷ এই দৃশ্যকে যদি সেই ছেলেটি অভিবাদন জানাতে পারে তবেই আমার তাকে পছন্দ হবে। ভীষণ পছন্দ হবে। 

 

না না, মিস সেন, এটা খুবই অ্যাবসার্ড। যে পুরুষ আপনাকে চায় সত্যি, সে এই দৃশ্য কীভাবে মানবে?

সেইজন্যই তো বলছি ডক, আমার জন্য একটা দৃশ্যই আল্টিমেট। 

 

সেটা কী?

শহর জনহীন। আমি ভাঙা জানলা দিয়ে দেখছি,  সাদা দস্তানা পরা দুটো হাত নির্জীব মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। তার পেছনে ধোঁয়া, অন্ধকার আর আগুন!

 

12 comments:

  1. এত অনন্য এই লেখা! ভাবনার এই ভাঙচুর নতুন জলহাওয়া আমাকে তোমার লেখার কাছে নিয়ে আসে বারবার । আর গদ্যটা এত ভালো,স্মুদ কিন্তু অন্তর্ঘাতময়!— প্রীতমদা

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগলো। :)
    তোমার অন্য লেখাগুলোর মতই, পরিণত চিন্তার প্রকাশ।

    ReplyDelete
  3. অসম্ভব লেখা তো । এ লেখা আমি অন্তত কোনওদিন পারব না । দু'বার পড়লাম । ভীষণ ভাল । কখনও সামনা সামনি এ লেখা নিয়ে আলোচনা করব । প্রত্যাশায় রইলাম এমন লেখা পুনরায় আরও পাওয়ার ।
    ।। শুভদীপ নায়ক ।।

    ReplyDelete
  4. খুব অন্যরকম লেখা। বুদ্ধিদীপ্ত। গতানুগতিক সময়ে এমন লেখাই মুখে স্বাদ এনে দেয়, মগজে তৃপ্তি।
    ...আচ্ছা, পিয়ানো বাদক ছেলেটির অপ্রস্তুত ঠোঁটে চুমু খেতে হলে তার অনুমতির প্রয়োজন নেই? তার সম্মতি বলে কোনও বিষয় থাকবে না কেন? সমগ্র সমাজ পুরুষতন্ত্রের মায়ায় আচ্ছন্ন আর নারীর চুমু একমুখী হলেও পুরুষ কৃতার্থ হয়ে যেতে পারে বলে?

    ReplyDelete
  5. খুব অন্যরকম লেখা। বুদ্ধিদীপ্ত। গতানুগতিক সময়ে এমন লেখাই মুখে স্বাদ এনে দেয়, মগজে তৃপ্তি।
    ...আচ্ছা, পিয়ানো বাদক ছেলেটির অপ্রস্তুত ঠোঁটে চুমু খেতে হলে তার অনুমতির প্রয়োজন নেই? তার সম্মতি বলে কোনও বিষয় থাকবে না কেন? সমগ্র সমাজ পুরুষতন্ত্রের মায়ায় আচ্ছন্ন আর নারীর চুমু একমুখী হলেও পুরুষ কৃতার্থ হয়ে যেতে পারে বলে?

    ReplyDelete
  6. অসম্ভব ভালো লাগলো! ♥

    ReplyDelete
  7. অত্যন্ত ভালো লেখা।এদের ১টা অদ্ভুত নামে ডাকি ~ কবিতাদ্য।আরো ভাঙচুর হোক দৃষ্টি'র; প্রবল ভাঙচুর হোক দৃশ্য

    ReplyDelete
  8. bah ... bhalo laaglo

    ReplyDelete
  9. আত্মকথন ও কথোপকথন । প্রথম কবিতায় " আপনি কি লেখেন " - এর মর্মার্থ যেন শেষ কবিতায় এসে বৃত্ত সম্পূর্ণ করলো । ভালো লাগলো ।

    ReplyDelete
  10. দুটো মানুষের একে অপরকে ভুলতে না পারার হেতুটা ক্লাসিক আমার কাছে। খুব ভালো লাগল।

    ReplyDelete
  11. খুব সুন্দর লাগল দুটোই ।আপনার আরো লেখা পড়তে চাই।

    ReplyDelete