বাক্‌ ১৪৪ ।। হাসান মোস্তাফিজ



ঋণ

স্পিডবোট থেকে নামতে গিয়েই পড়ে গেলাম। স্থানীয়রা হেসে উঠল চালক বলল— ভাই, তাড়াতাড়ি উঠুন, নাহলে সাপ কামড় দিবে।
আমি উঠতে পারছি না। ওদিকে কামড় খাওয়ার ভয়। আমার সঙ্গে মাঝারি উচ্চতার, মাধুরী গোঁফসহ এক ভদ্রলোক বসেছিল। সে এবার লুঙ্গিটা গিঁট মেরে বেঁধে পানিতে ঝাঁপ দিল। শরীরের সমস্ত ভর নিয়ে নিল নিজের উপর।
বোটে উঠতেই আমি দেখলাম কিছু সাপ তরঙ্গরূপে পানিপথের সমান্তরালে চলছে। আমি ভদ্রলোককে ধন্যবাদ দিলাম। কিন্তু উনি মুখ কুঁচকে বললেন— আমি বিনিময় নেই।
বেশ, সিগারেট বাড়িয়ে দিলাম। নিলেন না। ক্যাশও নিবেন না।
আমি শেষে বললেন— কী চান তাহলে?
ততক্ষণে আমরা ঘাটে পৌঁছে গেছি। লোকজনও কম। উনি হেসে বললেন— আপনার স্পার্ম।
রোম খাড়া হয়ে গেল। আমি এই যুগের ছেলে, সে অনুযায়ী মাস্টারবেশন করেছি কিছুবার। বহু স্পার্ম অপচয় হয়েছে। কিন্তু উনি তা দিয়ে কী করবেন?
ভদ্রলোক কথা বাড়ালেন না। রুক্ষ গলায় বললেন— দেখুন, আমি আপনাকে বাঁচিয়েছি। আপনি এখন আমার কাছে ঋণী। ঋণ শোধ করতে চাইলে যা চাই তা দিন। নইলে আজীবন ঋণী থাকুন।
আমি বললাম— বেশ, ঠিকানা দিন।

ঘুম ভাঙল যখন, তখন নিজেই লজ্জা পেলাম। প্রথম কোনও হোটেলে থেকে এমন হল। ঘুমের মধ্যে আমি সাপকে স্বপ্নে দেখেছি। সাপ দেখেই যে ঘোরের ভিতর মাস্টারবেশন হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। আমি রুমসার্ভিসকে ফোন দিলাম। বললাম ক্লিনার পাঠাতে।
নিজে সাফ হয়ে যেই একটা সিগারেট ধরিয়েছি অমনি ক্লিনার আসল
—স্যার, আমাকে চেনেছেন?
আমি চমকে উঠলাম।
—হ্যাঁ, চিনেছি।
—আমার বাসায় আসতে হবে না। এতেই হবে।
ভদ্রলোক চাদর পরম মমতায় মুড়িয়ে নিয়ে হাসিমুখে চলে গেলেন।




ব্যতিক্রমী ফোনালাপ

অর্ণা বলল— তুমি সত্যি আসছ?
আমি বললাম— হ্যাঁ, আমি আসছি।
—কেন আসবে?
—তোমার নিকটে থাকতে চাই।
—আমার ভয় লাগছে জানো। মা এখন লাইফ সাপোর্টে।
—আমি আসছি এক্ষুনি। এই আর বিশ মিনিট।
—কালও এসেছিলে। হসপিটালের নীচে বসেছিলে।
—হ্যাঁ, তা ছিলাম। ওদের ক্যান্টিনের চা খুব বাজে। সিগারেট খেতে পারিনি। মুখ আঁশটে হয়ে গিয়েছিল।
—আবার সিগারেট?
—তুমিই তো সিগারেট।
—মানে?
—আমি সিগারেট টানতে গেলে ভাবি, ফিলটারটা হল তোমার ঠোঁট। তোমাকে চুমু খাচ্ছি।
—তুমি অনেক অসভ্য। তাও কেন তোমাকে ভালো লাগে?
—আমিও বুঝতে পারছি না। এর পিছনে হয়তো ধর্মের হাত আছে। তোমার আমলনামায় হয়তো আমার নাম লেখা।
—এই, ধর্মের কথা বলবে না। আমি দোজখের বর্ণনা সহ্য করতে পারি না।
—বেশ, বলব না।
—আমি আর পারছি না। বাবা খুব কাঁদছেন। অথচ জানো, বাবা মাকে পিটাতেন। মার শরীরকে ব্যবহার করতেন আমের খোসার মতো।
—আনন্দ হয়তো সেখানেই।
—কী বললে?
—বললাম,আনন্দ হয়তো সেখানেই।
—চুপ, স্টুপিড।
—অর্ণা,আমি ভালোবাসি তোমাকে। তুমিও আমার কাছে আম। তবে আমি তোমাকে খোসা না, আমি আমের মাংসের মতো তোমাকে খাব।
—প্লিজ থামো। আমি পারছি না আর। চতুর্দিকে কেন এত কোলাহল?
—আমি এসে গেছি। এই শুধু ফুটপাত পার হয়ে রাস্তা ক্রস করব।
—তুমি কেন ভালোবাসো আমাকে?
—খাওয়ার সময়ে কানে কানে বলব।
—চুপ।
—আচ্ছা।
—এই না, চুপ করবে না। যা বলছিলে বলো।
—তোমার শরীরে যে আবেদন আছে তা অন্য কারওর শরীরে আমি পাইনি।
—এর জন্য ভালোবাসো?
—না আর-একটা কারণ আছে। তোমার কানের লতিটা খুব মোটা। কামড়িয়ে মজা পাওয়া যাবে।
(ফোঁপাতে ফোঁপাতে) মা মারা গেছেন। বাবা ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছেন।
আমি ফোন কেটে দিয়ে হসপিটালে ঢুকে গেলাম।




শিল্প যাকে হাঁস বানায়

নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, শট-টা হয়নি। চোখের সামনে এমন অবাধ্যতা সহ্য করা যায় না। ডাইরেক্টর এসে আবার বললেন নজরুলকে— কী হল, তুমি কলিজাগুলি বারবার ফেলে দিচ্ছ কেন? খেয়ে ফেলো।
নজরুল কাঁচুমাচুভাবে বললদাদা, এগুলো তো কাঁচা। রান্নাও না। যদি নুন দিয়ে একটু সিদ্ধ করে আনতেন।
ডাইরেক্টর রেগে গেলেন। ঝাড়ি দিয়ে বললেন— তোমার সাথে আমার এই কথা ছিল? তুমি সুযোগ চেয়েছ আমি দিয়েছি। এখন সুযোগ কাজে লাগাও। মনে রেখো, একটা মহৎ শিল্প সৃষ্টির লক্ষ্যে তুমি এই ত্যাগ করছ।
শট-টা পরে ভালো হল। ডাইরেক্টর এবার নজরুলকে একটা হাঁসের খামারে রাত কাটানোর হুকুম দিলেন। পরের শুটিংয়ে মাছের নাড়িভুঁড়ি খেতে হবে।

ডাইরেক্টর দ্বিতীয় কাপ চা শেষ করে শুটিং শুরু করলেন। নজরুল অভিনয় দারুণ করল নাড়িভুঁড়ি যে এক্সপ্রেশন, যে আত্মতৃপ্তি নিয়ে খেল তা দেখার মতো। ডাইরেক্টর চাইছেন দ্রুত শট-টা শেষ হোক। যাতে কাট বলা যায়। শুধু দুইটা ডায়লগ দেওয়া বাকি। ডাইরেক্টরের অগাধ বিশ্বাস নজরুল পারবে। নজরুলেরও আত্মবিশ্বাস সে পারবে।
কিন্তু ডায়লগ বলতে গিয়েই সাউন্ডে সবাই শুনতে থাকলপ্যাক, প্যাক, প্যাক, প্যাক, প্যাক, প্যাক, প্যাক, প্যাক...

1 comment: