ড্যানিয়েল ও রক্তপাখি
If he waits for the ideal moment, he will
never set off; he requires a touch of madness to take the next step. The
warrior uses that touch of madness. For - in both love and war - it is
impossible to foresee everything.
-Paulo Coelho
১.
নিজের তৃষ্ণার কাছে আজ
নিভৃতে বসেছে ড্যানিয়েল। নিস্তরঙ্গ শহর থেকে ডানা ঝাপটে উড়ে এসেছে তার রক্তপাখিটি।
ঠোঁটে একটি আধভাঙা ব্লেড। সাবধানে নামিয়ে রাখে কোলের উপর। এরপর থেকে অন্ধকার শুরু
হবে, অর্ধনিমিলিত কিছু লাল চোখ নিয়ে জেগে উঠবে তার বোধগুচ্ছ। এরকম হননের সময়ে
প্রতিবারের মতই নিজের উপর ক্রমশ ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে ড্যানিয়েল। শরীর জুড়ে তার যেন
জেগে আছে এক নির্লজ্জ কুঠার। তার হাতলে যেন চাপ দিচ্ছে কেউ আর ছোট একটা দ্বীপে ঘুম
আসছে না কারো। ফিনকি দিয়ে অশ্বগন্ধা মাটির প্রতিটা রন্ধ্র থেকে নির্গত হচ্ছে জমে
থাকা ষান্মাসিক তরল। ওই তো তৃষ্ণার কাছে ফিরে আসছে সে। ড্যানিয়েল! দু হাত ভরে পান
করছে তার আকন্ঠ ইহজন্ম। রক্তপাখিটি উড়ে যায় ফড়ফড় ক'রে। শহরে
নরম সুখের দিন ফুরিয়ে আসছে...
২.
অসাবধানতায় আজ আবারও ঘরের
পুরোনো খোলা টিনে পা কেটে গেছে ড্যানিয়েলের। মেঝেময় ভেসে যাচ্ছে রক্ত। তার থেকেই
নীচু হয়ে একটি ঈষৎ কোঁকড়ানো পালক তুলে নেয় সে। বোধহয় দুর্ঘটনার সময় রক্তপাখিটির গা
থেকে খুলে পড়েছে। গড়ানো রক্ত দোয়াতে তুলতে থাকে উবু হয়ে। আজকের রক্ত তার পরেরদিনের
কলমের রসদ। রসদ মজুদ করা তাকে শিখিয়েছে বুভুক্ষু শহরটি। রক্তপাখিটি আর্চে ব'সে গায়ের
নোংরা খুঁটছে একমনে। চারপাশে যেন ফিসফাস, আর্দ্র গলার
স্বর আর থেকে থেকে কান্নার উতরোল। এমন অশান্ত দ্বীপে কেন নিভতে এল ড্যানিয়েল!
এখানে কালো নেই। ক্যানভাসে ছুরি চালিয়ে দিয়ে চ'লে গেছে ভোর।
তার ক্ষতের ফাঁক দিয়ে ড্যানিয়েলের চোখে ভেসে উঠছে... বুভুক্ষু শহরটির বাসস্টপ,
কাটাদাগ, রক্তবিন্দু, অভিশম্পাত---
সব ফিরিয়ে দেওয়া হবে চোখে চোখে...
৩.
উত্তরের খোলা জানলা দিয়ে
শনশন ক'রে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে পড়ছে ঘরে। দুচোখে হিমযুগ নিয়ে এই একলা দ্বীপে ঘুমিয়ে
পড়েছে ড্যানিয়েল। তার কপালে এখনো গতরাত্রে রক্তপাখিটির ভেঙে যাওয়া ঠোঁটের রক্ত
জমাট বেঁধে আছে। আজ একটা যুদ্ধের স্বপ্ন দেখবে ব'লে চোখ
বুজিয়েছে ড্যানিয়েল। তুরিন থেকে আগত ঘোড়ার যে খুরধ্বনি গতরাত্রে ঠোঁটের আঘাতে থেমে
গেছিল আজ সেখান থেকে ওকে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছতে হবে। আওয়াজ পিছনে ফেলে হেঁটে চলার একটা
বিচ্ছিন্ন অভ্যাস তৈরি হয়েছে স্নায়ুকেন্দ্রে। দূর থেকে দেখতে পায় ড্যানিয়েল,
কনস্ট্যান্টিনোপল এর আকাশে কালো মেঘ জমেছে। ঠিক এরকমই মেঘের দিনে
শহরে ভিজেছিল ড্যানিয়েল ও আরেকজন। এখন বেশ ব্যথা করে ওঠে। এই ব্যথার স্রোত ক্রমশ তীব্র
হচ্ছে আজ হাঁটার সময়। পারছে না আর ও। রক্তপাখিটি ভাঙা ঠোঁটে আধখাওয়া লিপস্টিক দিয়ে
মেঝেতে কীসব এঁকে চলেছে। বোধহয় শহরের কোনো দৃশ্যকল্প। দেখতে দেখতে বৃষ্টি নামে।
রাস্তা ভিজে যায়। যুদ্ধ শুরু হল...
৪.
ড্যানিয়েলের সারা শরীর জুড়ে
যুদ্ধের ছাই লেগে। এই যুদ্ধের কটা দিন ও মাথার কাছে বাইবেল রেখে ঘুমোয়। দেখেছে, এতে ওর
মাথায় অনেক দরজা খুলে যায়, অনেক নদীর পাড় ভাঙে, অনেক শস্য উঠে আসে নিবিড় থেকে। শহরের কিছু দৃশ্য এখন ড্যানিয়েলের কাছে
ভাঙা চশমার মত--- প্রয়োজন, কিন্তু অন্যমনস্ক রক্তক্ষরণ। অতীত
থেকে যে বৃষ্টিপাত এসেছিল সে এখন শান্ত। রক্তপাখিটি ঠোঁটের ক্ষতের উপর একদৃষ্টে তাকাতে
তাকাতে ডায়েরির উপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এক অফুরন্ত সময় ধরা আছে এই ডায়েরির মধ্যে,
কাটাকুটি করা তারিখ আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে আছে দিনের হিসেবে। এক পাতা এক
পাতা ক'রে যুদ্ধের অন্তিম দিনের দিকে এগোচ্ছে
কনস্ট্যান্টিনোপল আর স্বপ্ন লেগে ঘুমের মধ্যে বারবার হাত কেটে যাচ্ছে
ড্যানিয়েলের...
৫.
আজ যুদ্ধের অন্তিম দিন।
ড্যানিয়েলের মাথার ভিতর যে বাড়িটি নির্মাণ হয়েছিল তার চুন খসে পড়ছে সকাল থেকে।
ভবিষ্যৎ একটি কালো কাচ। যার থেকে আটটি মেষশাবক দূরে কনস্ট্যান্টিনোপল এর জন্মান্তর
ঘটছে। অবিরাম শিষ দিয়ে চলেছে রক্তপাখিটি। তার ঠোঁটে এখন জয়ের সুগন্ধ তৈরি হচ্ছে।
ছুরির ঝকঝকে ফলাটির অনন্ত আগুনের শিক্ষা সম্পূর্ণ ক'রে যুদ্ধক্লান্ত তীরে এসে
দাঁড়ায় ড্যানিয়েল। দেখে, দ্বীপের সীমারেখা জুড়ে জল থেকে উঠে
আসছে শহর। সেই আশ্চর্য শহর!
একটি ছাতা, দুটি গরম চা
এর ভাঁড় ও ক্যালেন্ডারবর্জিত একটি প্রাচীন শহর...
ভীষণ ভালো কবিতাগুচ্ছ। ❤
ReplyDeleteভালবাসা তোমাকে❤️
Deleteখুব সুন্দর ❤️
ReplyDeleteভালবাসা
DeleteCHOMOTKAR!!!
ReplyDeleteধন্যবাদ
DeleteBHISON BHALO LAGLO
ReplyDeleteকি অদ্ভুত একটা ambience, দারুন লাগলো।
ReplyDelete'শহরে নরম সুখের দিন ফুরিয়ে আসছে'
'আজকের রক্ত তার পরেরদিনের কলমের রসদ'
Memorable!
ভালবাসা নিও❤️
Deleteকাব্যময়... আবার অনায়ায়সে গদ্য সিরিজ বলা যায়... অনায়াসে জন্ম দিতে পারে আখ্যানময় কাহিনীর।
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteঅসম্ভব চিন্তনের যে বিচ্ছুরণ ঘটেছে তা কবিতার অনন্য সম্পদ। এমন কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয় কবিতার ভিতর গল্প কিংবা গল্পের ভিতর লুকিয়ে আছে কোনও কবিতা নিভৃতে। একে ফ্যান্টাসি বা জঁর সাহিত্য ফিকশন বললেও অত্যুক্তি হবে না।
ReplyDeleteধন্যবাদ দাদা
DeleteBhalo legechhe. ❤❤
ReplyDeleteভালবাসা ভাই
Deleteমন ছুঁয়ে গেলো। লেখককে একরাশ শুভেচ্ছা।
ReplyDeleteতোমার মন ছোঁবে এটাই আমার প্রাপ্তি
Deleteঅবাক হয়ে পড়লাম। রেশ থাকবে অনেকদিন।
ReplyDeleteআহা!♥
ReplyDeleteধন্যবাদ
DeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteঅসাধারণ অসাধারণ!
ReplyDeleteপ্রত্যেকটি কবিতাই ভীষণ ভালো।
যখন প্রসঙ্গ আসে, প্রথা থেকে বেরিয়ে আসার - তখন আপনার এই লেখার মতো লেখাই সর্বাগ্রে স্থান করে নেয়। ভাষা প্রয়োগে আপনি অনন্য।
ReplyDelete