বাক্‌ ১৪৪।। অনুসরণমঙ্গল ।। ২য় অধ্যায় ।। শুভংকর গুহ

 

পারবাসুদেবপুরে লাঙ্গল নিয়ে প্রবচন আছে,- “আগে লাঙ্গল যে বাগে যায়, পিছু লাঙ্গল তার পিছনে ধায়।”  অর্থাৎ আগের মানুষ যে পথ ধরে, সমর্থকরা সেই পথ অনুসরণ করে। সংসারে বাবার প্রথম পুত্র সুপথগামী বা বিপথগামী হলে গোটা সংসার বা পরের সন্তানগুলি সেই পথে যায়। পারবাসুদেবপুরে এমন কথার প্রচলন থাকলেও, নিবারণের অনুজ দিগম্বর লাঙ্গল তৈয়ারির কাজে মন দেয় নাই, বরং সে মানচিত্র নক্সার কাজ শিখেছে। কাগজের ওপরে, বিস্তৃত ভূমিখণ্ডের বিস্তারকে ছোটো ছোটো দাগে ধরে নক্সা করে, গ্রামজীবনে এক প্রথাবিহীন শিক্ষা গ্রহণ করেছে।

বাবলা কাঠের ফলাটিকে নিবারণ ঘষে যাচ্ছিল, আর মোঘল আমলের রাজা বাদশাদের কথা মনে করছিল।  হাত বুলিয়ে, বালিকাগজ দিয়ে ঘষে ঘষে কাঠকে মসৃণ করে তুলতে হয়। এ বড় পরিশ্রমের কাজ। ধৈর্য  সময় ও শ্রম না দিলে লাঙ্গল মাটি কর্ষণের সময় আরাম পাবে না মাঠকর্মীর হাতের তালুতে জলঠোসা হবে।  

নিবারণ লাঙ্গল বানানোর কাজে কোনো সহকারিকে মজুত করে না, নিয়োগ করে না। লাঙ্গল বানানোর কাজ হল সাধনার মতো। সাধনা একাই করতে হয়। সেই কাজে অন্য কাউকেই নিযুক্ত করা যায় না। প্রতিকূল ও অনুকূল এই দুই অবস্থানকেই উপভোগ করতে হয়। কাঠ যত লোহার মতো পোক্ত হবে, সাধনার স্তর ততই কঠিন হবে। মাঠ থেকে কাঠ সে বলদযানে একাই নিয়ে আসে। টুকরো টুকরো করে কাজের অনায়াস সে নিজেই আয়োজন করে।

আহা কি বাবলাবাবা ছিল। পারবাসুদেবপুরের গোড়াপত্তনের আগে, বাবলাবাবা ভূমির অধিশ্বর ছিল। আদিম মাটির গভীরে শিকড় ছড়িয়ে অনন্তকাল ধরে কাব্য রচনা করে, মহাকবি কৃষ্ণরাম দাসকে শীতল ছায়া দিয়েছিল। বাবলা গাছ না কি নক্ষত্রজল নিয়ে, নিজের শাখা প্রশাখাকে মজবুত করে তোলে। কাঠের শরীর বাবলাবাবার  অভিমানে পোক্ত লোহা হয়।    

আর সব গাছেদের মতো বাবলাবাবা শাখা প্রশাখায় গভীর সবুজ ধরে না। ভাগ্যিস উট নেই পারবাসুদেবপুরে। না হলে, বাবলাবাবার ডাল চিবিয়ে, মাটিতে রক্তের ফোঁটা ফেলে দিতনিবারণের বারে বারে মনে হত বাবলাবাবার ডালে ডালে শাখা প্রশাখায় পূর্ব পুরুষদের আশা আকংখা সব ঝুলে ঝুলে রয়েছে। বাতাস এলে পূর্বপুরুষ দোলে বাতাসে।    

টুপ টুপ করে ফল পড়ছিল আর সব, জামরুল জাম আম বিস্তর নিমফল। গোছা গোছা কামিনি বকুল কাঠচাপালি বাতাসে ভেসে যেত দিঘি বা ঝিলের দিকে, দেঁতের খালের দিকে তারপরে নানান কল্পনার মিছিল জেলে ডিঙ্গির রূপ ধরে খলায় চলে যেত গভীর দক্ষিণের জেলেদের সাথে। এরা কেউ দানো হয়, দস্যু হয়, ডাকাত বা বণিক ও জলবেদে।  

নিবারণ গাছটির খণ্ড খণ্ড অংশকে রশি দিয়ে চারটি বলদের গলায় বেঁধে দিয়ে সেনের আড়া থেকে পারবাসুদেবপুরে ঘষটাতে ঘষটাতে এনেছিল নিজের কুটিরের উঠোনে। নিবারণের মনে হয়েছিল, সেনের আড়াকে ছিন্ন করে নিয়ে এল, আর জনপদ কাঠ মৌমাছিতে ভরে গেল।  

ধুলো ভর্তি মাঠে, ভোরের ক্ষুদে আকারের পাখিগুলি, ধুলো স্নান করছিল। নাড়িকুড়ি গ্রামের আদিবাসী ব্যাধ পাখি শিকার করে, শুকনো ঘাসের দড়ি দিয়ে বেঁধে, ফিরে যাচ্ছিল, উনুন পাতা উঠোনে। পালক ছাড়িয়ে পাখির মাংস পোড়াবে, আর সেই ধোঁয়ার গন্ধ হাজির হবে, পারবাসুদেবপুরে। বাবলা কাঠ নিয়ে যাওয়ার ঘষটানি শব্দ। পাখিগুলির ধুলো স্নানকে ভাঙতে পারে নি। ভোরের পৃথিবী সেই দিন ছিল নীরব। আর শীতল, দূরে দূরে জলাশয়ের চিত্রগুলি মাটির কলসির জলের মতো শীতল হয়ে ছিল। একটি চাতকের কান্না নিবারণকে ফিরিয়ে এনেছিল, বাবলাকাঠের টেনে নিয়ে যাওয়া পথের ওপরে। ভোরের বাতাস এফোঁড় ওফোঁড় – বাবলাকাঠের ডালপালাগুলি মরুভূমির সাপের মতো ফণা তুলেছিল।

সেই দিনের ভোরের বাবলাবাবার খণ্ড খণ্ড অংশগুলি, লাঙ্গলের রূপ নিচ্ছে। চমৎকার মসৃণ হয়ে উঠছে, আর কাঠের পালিশ আলোর পাতলুনের সাথে মশকরা করছে। ঈষ বা লম্বা কাঠটি যত মসৃণ হবে, জমি কর্ষণের সময়, হাতের তালুতে আরাম বোধ হবে। মুড়োতে মসৃণ মিহি ঈষ গিয়ে ঠেকবে, লাঙ্গলের রূপ তখন দেখার মতো হবে। লাঙ্গল যত চোখা হবে, ফাল মাটি ছিঁড়ে দেবে অনায়াসে। বলদ শক্তি পাবে, জমি কর্ষণে আনন্দ পাবে। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা ফ্যানা মুক্তোর মতো হয় উঠবে।

অনাবাদি অন্ধ জমিকে প্রথম আলো দেখায় লাঙ্গল। লাঙ্গল যখন বিশ্রাম নেয়, সাই সাই বেড়ে ওঠে ফসল। চাষির আশা আকাংখা উচ্চতর হয়, প্রতিদিন নিবারণ মাঠে কাজে নামার আগে, পাটকাঠি দিয়ে লাঙ্গলের নকশা এঁকে নেয়। এই নকশার মধ্যেই নিবারণ আনন্দ, বিমর্ষ, উৎসাহ ও হতাশা বোধ করে। আকারে একটু খাটো হলে, মজা পায়। কেননা খাটো মানুষের জমির নাগাল পেতে সুবিধা হয়, দীর্ঘকায় মানুষ আকাশের খুব কাছাকাছি। কিন্তু নিবারণ মাঝারি গড়নের। সে হামাগুড়ি দিতে জানে না। আকাশ তার অনেক ওপরে, আর মাটি তত নিকটে নয়।

প্রতিদিন তার লাঙ্গল অধ্যয়ন, পুনরায় এবং পুনরায়। পিতৃদেবের অনুসরণের আদেশ তাকে বিচলিত করে যাচ্ছে। লাঙ্গল তৈয়ারির কাজ করতে করতে সে অন্যমনস্ক হয়ে যায়। কাজ থামিয়ে ‘অনুসরণের’ ভাবের ঘরে ডুব দেয়। ভাবে, অনুসরণ সীমাহীন, লাঙ্গলের কাজ সীমাবদ্ধ। তার শেষ আছে, কিন্তু অনুসরণের ক্ষয় নাই।

চমকে ওঠে নিবারণ, প্রতিদিনের লাঙ্গল চর্চাকে খাটো করতে নাই। আবার নিজের কাজে ডুবে যায় নিবারণ। যত্নে বালিকাগজ ঘষতে থাকে ঈষের চাদরে, কাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে পড়ে উঠোন জুরে। দুপুর গড়িয়ে এলে, পারবাসুদেবপুরের বাতাসে ফুটো হয়। মা শীতলা দেবী গাধার ঘাড়ের পুচ্ছের লোম ফুলিয়ে চলে যায় বনরেখার দিকে। গ্রামে গ্রামে পড়ে থাকা বসন্তের গুঁটি নিয়ে যায়। তিনি মঙ্গলময়ী। কল্যাণময়ী। বহুদূরের বনরেখা জানিয়ে যায়, এই বিশ্ব সংসারে যে আসে, সে আর যায় না, কোনো না কোনো ভাবে সে রয়ে যায়, থেকে যায় অনেক চিহ্নের মতো দাগ নিয়ে। অনেক স্মৃতি নিয়ে। 

কৃষি কাজের মই আকারে খাটো কি লম্বা, কিন্তু পোক্ত হওয়া চাই বিস্তরমাঠের মাটি বানানোর সময়, ভারসাম্য রক্ষা করে। নিবারণ মইয়ের আদল দেখতে দেখতে ভাবছিল, ঠোকাঠুকি করে মইয়ের পোক্ততাকে নিশ্চিত করতে হবে। খণ্ড খণ্ড জলাশয় দিঘি ও খালে এখন পুঁটি মাছের মেঘ ছড়িয়ে আছে। কখনও কখনও নাক উঁচিয়ে গলসে মাছের গন্ধ নিতে চেষ্টা করে নিবারণ। গলসে বৃষ্টির আনাগোনা বোঝে। বৃষ্টি পড়লেই গলসে মাছে একপ্রকার কালো পালিশ আসে। ঝিল দিঘি উপছিয়ে জলে গলসে মাছের স্ফূর্তিই আলাদা।

বিদ্যাধরীর পূর্বদিক থেকে, জেলে ডিঙ্গিগুলো দেঁতের খালে চলে আসে। গোটা বর্ষাকাল খলায় খাটে ওরা। পারবাসুদেবপুর, নিমতের বাজারে, মাছ বিক্কির করে। তামার ঘটি ক্রয় করে। আইবুড়ো কদু, ভকভকির খোল, বেতের ধামা কুলো, গোটা কয়েক গামছা ও মধুর পাত্র উপার্জন করে গভীর দক্ষিণে ফিরে যায়। অনেকে যায় খলা ফেরত খুলনা – যশোহর, বাকি বসিরের হাটের দিকে। আবার কেউ খুব কাছাকাছি ফিরে যায় গড়বালিয়ায় বা পাতিহালের দিকে। পাতিহাল আর গড়বালিয়ার নৌকো দেখলে নিবারণ চিনতে পারে। আকারে খাটো, গভীর গলুই। আর খুলনা ও যশোহরের ডিঙ্গিগুলি লম্বাটে, সরু গলুইয়ে কেউ কেউ বাড়তি উদর বানিয়ে রাখে। দূরের যাত্রাপথ বলে। খুলনা যশোহরের মালোরা অধিকাংশই যুবক, পথ খুব দুর্গম বলে, কামটের দাপটে জর্জরিত।

বিলে দিঘিতে গেঁড়ি, গুগলি, জলজ ফল সংগ্রহ করতে আসে তাদের কাছে জেনে নেয়, তল্লাটের খবর। দিঘির পারে বা নদীপথের অববাহিকায় অবস্থাপন্ন ঘর দুয়ার দেখলে, ডিঙ্গি ছেড়ে পাড়ে উঠে আসে, সোমত্তের খোঁজ পেলে, গলসে মাছের তলপেট নিয়ে রসিকতা করে। শরতের শেষে, কাশফুলে যখন হলুদ রঙ ধরে, তখন খলা থেকে ফিরে যায় নিজেদের গ্রামে। আবার চৈত্রে শুরু হয় খলার যাত্রা। মইগুলো ঠেসান দেওয়া থাকে, মাটির দেওয়ালে। অনেকে ফিরে যাওয়ার আগে সুন্দর গল্প ফেঁদে দিয়ে যায়। পারবাসুদেবপুরে নতুন গল্পের জন্ম হয়। নিবারণের অনুশোচনা হয়। ঘরকুনো, বাস্তুপ্রিয় মানুষগুলি গল্পশুনে বিলের ধারে আনন্দে পায়রা ওড়ায়। বর্ষার পরে ভুষোকালির উনান থেকে ধোঁয়া ওড়ে। মেটে রঙ তৈরি হয়। 

কেশবনন্দনকে দেখে নিবারণ বলে,-- অনেকদিন পরে কাপাস ফুলের মতো ভেসে এলে যে ?

এলামই বটে নিবারণদা। এইবার ফিরে আসা অনেকদিন আমার মনে থাকবে। রূপকথার দেশ থেকে এলাম গো। সাপের তলপেটের মতো রঙ সব তল্লাটের। কি নরম ভেজা মাটি। দেখলে, স্পর্শ করলে মনে হয়, হাতে মঙ্গলকাব্যের শ্রদ্ধা আদর উঠে এসেছে। দুধ, দুধের খড়, ঘি, মাখন, মালপোয়া, চিনে বাদাম, কদমা চিনির পুতুল মিছরিতে ভেসে যাচ্ছে। দিন কয়েক গড়িয়ে উদরে ঠেসে ঠেসে চরিত্র পাল্টে গেল নিবারণদা।  

খবর সব ভালো এবার। ভালো বর্ষা হল এবার। খলায় ফিরে গেল মালোর দল।

চাঁদার বিলে মাঠে গেছিলাম। একটু শখ হল, ভাবনার।

কী ভাবলে ?

এখন কেন আর কয়েদবেল হয় না ?

সে তো চৈত্র মাসের গল্প

সে খেয়াল তুমি বুঝবে না কেশবনন্দন।

কেন? দেখেই এলাম। কতকাল আগের কয়েদবেলের খোলগুলি ভেঙ্গে পড়ে আছে দেঁতের খালের পাড়ে। মাটির গোল গোল মণ্ডের মতো লাগছে দেখতে।

মাটিই তো হবে। সময় মাটি করে, না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস করে। না হলে, চৈত্র আসবে কি করে আবার ? প্রকৃতি বোঝো না কেশব ?

কেশবনন্দন চমৎকার গড়ে ওঠা লাঙ্গলের রূপ দেখছিল। লাঙ্গলটি দেখতে দেখতে ভাবল, সংবাদ যা এনেছে, সেই সংবাদ অনেক ব্যথার। বলল,-- নিবারণদা সংবাদ এনেছি গো। কিন্তু ব্যথার।

ব্যথার ? 

বিভ্রান্তির।

বিভ্রান্তির ? 

আমার বাবা নিত্যানন্দ তার আপন ঘরের মাটির নিচে এক কলস মোহর পুঁতে রেখে গেছিল। গত বছর নিজের উপস্থিতির মায়া কাটালেন। ঘরের মাটি খনন করা হচ্ছে কিন্তু কলস পাচ্ছি নে। মাটি উপরে উপরে ঢিবি হল ঘরের ভিতরঅবশেষে এক জ্ঞাতির তল্লাট থেকে ফেরতা পথে সিদ্ধান্ত নিলাম, কলসের কথা আর ভাবব না। সে ভারি নির্গুণ মায়া। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, কলসের ভাবনা যে সারাক্ষণ জড়িয়ে রেখেছে।

তা হলে এমনতর অশান্তি নিয়ে জ্ঞাতির বাড়ি থেকে ফিরলে এবার ?

উনি বাবার খুব নিকটজন ছিলেন। বাবার অনেক গোপন কথা তিনি জানতেন, আমরাও যা জানতাম না। তাই কলস রহস্যের কথা তার কাছে জানতে গেছিলাম।

খনন করেও যখন কিছু জানতে পারলে না, উনি কি কিছু বলতে পারলেন ?

না। কিছুই জানতে পারলাম না। এখন আমার মনে হচ্ছে, তিনি নিজেই তার ঘরের ভিতরে সংশয় ও বিভ্রম রেখে গেছেন। আমরা সাড়া জীবন তার পিছনে ছুটে যাই।

আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কেন এমন সংশয়ের শিকার তুমি ?

কেশবনন্দন চুপ। দৃষ্টি স্থির। শরীরটা মনে হচ্ছে থেমে গেছে। রুদ্ধ শ্বাস প্রশ্বাস। সংশয়ের মধ্যে তাকে ভাবলে জীবন যে অচল। কি ভেবে সে হঠাৎই বলে উঠল,-- পেন্নাম গো পেন্নাম। তোমায় পেন্নাম।

কাকে পেন্নাম কেশবনন্দন ? 

আমার ভিতরে সংশয় দিয়েছেন যিনি দূর করবেন তিনি। এখন মনে হচ্ছে মোহরভর্তি কলসির কথা তিনি বানিয়ে বলেছিলেন। 

তোমার পিতা মোহর ভর্তি কলসির কথা কি সত্যই বলেছিলেন, ভাবো একবার ? না কথাটিকে তোমরা নিজেরাই কল্পনায় বসিয়ে, ধ্রুব সত্য ভেবে নিয়ে তোমার বাবার ঘরের ভিতরে, বৃথাই খনন করেছ। 

এই বিষয়টি থেকে আমি মুক্তি পেতে চাই নিবারণদা। মোহর ভর্তি কলসের কথা ছেলেবেলা থেকে জেনে আসছি। এই বিষয়ে সংশয় আরও গভীর হোক আমি চাই না।

নিবারণ ঈষটিকে মাটিতে শুইয়ে রেখে, লাঙ্গলের মিহি গড়নে বালিকাগজ ঘষতে ঘষতে হাত বুলিয়ে মনে মনে শিশির পতন আনল। তারপরে বলল,-- পারবাসুদেবপুরে সবারই লাঙ্গলবিদ্যা জানা উচিৎ। না হলে, গ্রামের চাষের জমির মাটি তুলোর মতো নরম হবে না। 

বাবা তকলিতে সুতো টানতেন আর হুঁকোতে দম দিতেন। মাঝে মাঝে বেলঘরের সাপ্তাহিক হাটে গামছা বিক্রি করতেন। তবে বাবার মোহর সঞ্চয়ের নেশা ছিল। সোনা ও রূপার মোহর। সব এখন ইঁদুরের দাঁতে পরিণত হয়েছে গো নিবারণদা। 

ইঁদুরের দাঁত, নুড়ো যাই বল না কেন, মোহর আসলে তাই। তুমি আমাকে বলো, মোহরের সঙ্গে লাঙ্গল বিদ্যার কি সম্পর্ক আছে ? 

লাঙ্গল ঘরে মোহর আনে। কিন্তু সেই মোহর চোখে দেখা যায় না। ধানের শরীরে মোহরের স্পর্শ জড়িয়ে থাকে। গার্হস্ত জীবনে লাঙ্গলবিদ্যা জানা চাই। এই বিদ্যা পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য আনে। লাঙ্গল মাটিকে এফোঁড় ওফোঁড় করলেই সংসারে মোহর আসে। তুমি টের পাবে না। তোমার বাবা নিত্যানন্দের কোনো দোষ ছিল না। মোহরের স্বপ্ন দেখা তার নেশা ছিল। স্বপ্নই বলো আর কল্পনাই বলো, তোমাদের তাই জানিয়েছিলেন। তোমরা কেনই বা সেটি ভেবে ভেবে দিন আকুল করছ ? এই ভাবে ভেবে নিজেরাই কেন সংশয়ে জড়ালে। নিজের বসতের কোঠায় যদি তিনি তার স্বপ্নটিকে পুঁতেই দেন, সেটি সম্পূর্ণ ওনার স্বাধীনতা।

সাধারণ ও অসাধারণ বিন্যাস ও বর্ণনা নিয়ে প্রকৃতি ও চরাচর চলমান ও জীবন্ত। আকাশ আলো বিলের খালের জলে খণ্ড খণ্ড ভেসে থাকা, ছোটো ছোটো দ্বীপের মতো ভেসে যাচ্ছে কচ্ছপের পিঠের মতো দোলাচল, দৃশ্যকর্তাকে অস্তিত্বের সন্ধান দেয়। দৃশ্যকর্তা বুঝে নেয় নিজের খেয়ালে আমি ছিলাম, আছি ও থাকব। ডিঙ্গিগুলি ভেসে ভেসে ভাসমান দ্বীপের মতো খণ্ডগুলিকে সরিয়ে দেয়। সেগুলি পাড়ে এসে ঘাই মারে।

তৃণভোজীরা লোভ সামলাতে পারে না, জলে ভেজা ঘাস তৃণ চিবিয়ে চিবিয়ে দেদার তোলে স্বাস্থে, গিলে নিলে উদরে দুধে মায়া তোলে। তিন চার ঘর পুঁতির কারবারিদের গাছের নিচে লক্ষ্মীবারের পাঁচালি পোড়ে, তক্তাপোলে হাই ওঠে আজানের, মৌমাছির চাকের তত্ত্ব গড়ে, ভীমরুল গাছে গাছে উড়ে কেশরের সন্ধান চালিয়ে পুড়ে যাওয়া খড়ের ওপরে মধ্যযুগের ফুল ফল বাগান খোঁজে। নিবারণ এইসব দেখতে দেখতে ভাবে, কাঠমাছিগুলি  মধু খোঁজার বিষয়ে যথেষ্ট খেয়ালিনিবারণ নিজেই ভাবে ক্ষমতার অধিকারী মানুষ যেমন ভাবে, - চালতা গাছটি নাম খোয়াল, হল কাঠমাছি বৃক্ষ। 

পারবাসুদেবপুর থেকে ডিঙ্গি যাচ্ছে নিমতের দিকে। ডিঙ্গিতে মানুষগুলি রঙয়ের বিন্দু বিন্দু যেন। নানা  রঙয়ের পোশাক। বোধহয় গান বাজনার দল যাচ্ছে, খোলের করতালের ডগা বাজপাখির মতো গলা বাড়িয়ে আছে। কিন্তু ভাস্কর পণ্ডিত পুঁথি বগলে নিয়ে ডিঙ্গির দিকে ধাইছে কেন ?

এক বিরল চিত্র, বাতসে হাত থেকে তার ছুটে গেছে ছাতা, পিছনে গড়াচ্ছে ছাতা কালবৈশাখীর এক টুকরো মেঘের মতো। দিবালোকের শেয়াল ছুটে যাচ্ছে, গাণ্ডিব গতিতে, শকুন মৃত পশুর লাশ ঠোকরাচ্ছে। শেওড়াহাটি, রমানাথপুর, পারবাসুদেবপুর, নিমতে, বেলঘর কেউ না কেউ কোথাও যাচ্ছে। একটি বিশেষ কোণে। উদ্দেশ্যহীন না উদ্দেশ্য ধরে। যাচ্ছে, সবাই আর পিছনে ফেলে যাচ্ছে মানচিত্র। নিবারণ জানে, এই বিষয়ে ভালো জানে দিগম্বর। কোন কোণের ওপারে কি, সোনাই নদীর দাগের পার ধরে নদীকূল, বেইলি সাহেবকে ফিটনে চড়িয়ে সব দেখিয়েছে। 

সত্যিই তো, কেশবনন্দনের ‘এইজন্য’ কথাটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অবশেষে কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই মোহর না পাওয়ার দুঃখ ও অনুশোচনা জল হয়ে গেল। এখন সে বুঝতে পারছে, একটি আগড়ের তার প্রয়োজন। নিবারণকে বলবে কি বলবে না, ভাবতে ভাবতেই কেশবনন্দন উঠে দাঁড়াল। উঠোন পার হয়ে যাচ্ছে তো আবার ফিরে আসছে। নিবারণ কেশবনন্দনের চিত্ত চাঞ্চল্য বুঝতে পারল।

আবার কি হল ?

ভাবছিলাম, তোমাকে বলব আগড়ের কথাটি।

আগড়ের ?

হ্যাঁ, আগড়ের।

কেন আগড় নাই তোমার ?  

চাষা যখন সরঞ্জামের গুরুত্ব বোঝে না,  ফিরে গিয়েও তাই আবার ফিরে ফিরে আসে। অবসরের সময়ে, মাঠে কাজ না থাকলে আগড়ের কথা মনে পড়ে। তোমার কাছে আগড়ের বায়না করার তাই সাহস পাই। আমার লাঙ্গল আছে আগড় নাই। তুমি আগড় লাঙ্গল মই আঙরো বানাতে জানো। যখনই আসি মনে হয়, তোমার দুয়ারে কি যেন ফেলে ফেলে যাই।    

আমার একটি বাড়তি আগড় আছে, তুমি সেইটি নিও। আগড়ের জন্য এত মন উচাটন করছ কেন ? কৃষি কাজই তো করবে। সাত সাধনার এক সাধনা হল কৃষিকাজ। ফসল করবে, ধান করবে ধানে দুধ আসবে, পারসে  আলের জমা জলে ঠুকরোবে, জ্যোৎস্না মোহর ফেলে যাবে মাটিতে, কুড়িয়ে নিয়ে সঞ্চয়ে রাখবেআমার গোয়ালঘর একবার দেখে যাও, তুমি চাষকাজের মর্ম বুঝতে পারবে। গোয়ালে সারি সারি কৃষিসরঞ্জাম রাখা আছে।

বললে যখন, একবার যাই দেখে।  

কেশবনন্দনের চোখ জুড়িয়ে এল নিবারণের গোয়াল আর গোয়ালকাড়া দেখে। এঁটেল মাটির সঙ্গে তুষ ও খড়ের কুচি এবং চিনি মিশিয়ে মসৃণ মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে দেওয়ালে। ধুনো ধোঁয়ার গন্ধ জুড়িয়ে আছে। চারি জুড়ে আঁখের গুঁড়ের মিষ্টি গন্ধ। ধোয়াপাকলা সকালেই সারা হয়ে গেছে। বাঁশের সরু সরু কঞ্চি ফেলে, জানালার সৌন্দর্য বিস্তার করা হয়েছে। ভুষোকালি দিয়ে কালো রঙ করা হয়েছে। শুকনো গুল্মলতা দিয়ে নকশার আদলে সামিয়ানা মাথার ওপরে শঙ্খচূড় সাপের ফণার মতো লকলকাচ্ছে। ছায়াগুলি মধ্যযুগের ভাষা নির্মাণ করেছে। দেওয়ালে পোড়া মাটির মেটে রঙ দিয়ে চাকার মতো চিহ্ন, খড়মযুগল হুঁকো লাঙ্গল মহাভারত পুঁথির চিত্র, দেবদেবীর চিত্র ও নকশার পাশে, মেজাজি তুলির টান, আঁকা হয়েছে সময়কে- অদৃশ্য তরঙ্গের মতো।   

সকাল থেকে ঈষটিকে মোলায়েম করতে বসে বসে হাঁটু টাটাচ্ছে। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে, নিবারণ যেন পুনর্জন্ম লাভ করল। বাইরের রোদ অনুমান করল, কল্পনার মাস্তুল তুলে উঠোনের গর্তে কয়েক টুকরো বরফ রেখে দিল।

কেশবনন্দন নিবারণের গোয়াল দর্শন করে বলল,-- আমার তো গোয়ালমন্দির নাই। অবলাগুলোর সঙ্গেই থাকি। কিন্তু তোমার গোয়ালমন্দির বেশ তফাতে।

অবলাগুলোর নিজেদের ভাবনা আছে, ওদের বেঁচে থাকার অভ্যাসে দখল বসাতে নাই কেশবনন্দন। মানুষের হিংস্র মনোভাব ওদের দিতে নাই। ওরা জগতের সবচাইতে বড় কাজ করে। কৃষিকাজ করে। ওরা আমরা মিলে ফসল উৎপাদন করি। আমরা শুধুমাত্র তার অংশীদার হব কেন ? কেশবনন্দন পশুযান দেখে তোমার কি মনে হয় ? পশুর শক্তি দেখে বোঝা যায়, মালিক তার পশুর ওপরে কত দয়াবান। বোঝা যায় তার সম্পদের অবস্থান। গলায় ঘণ্টির শব্দ খঞ্জনির তাল ঠোকেপশুর গলায় ছয় ছয়টা ঘণ্টা, কেন জানো ? মালিকের বিলাস বোঝা যায়। কাজকর্মের সংসার বুঝতে পারে, পশুযান কাছে এলে বন্দরে জাহাজ আসে, সম্পদ নিয়ে আসে। নৌকা জাহাজ পশুযান যাই হোক না কেন, যানের গতির সঙ্গে মানুষের হৃদপিণ্ডের ধুকপুকের একটা মিল আছে। ভেবে দেখ, পশুযানের বাঁদিকটা সম্মান করা হয়। ডানদিক সেই দিক থেকে অনেক কমজোর থাকে। আমরা সংসারে গ্রামজীবনে ডানদিকের সাথে আহ্লাদ করলেও ডানদিক আমদের দায়িত্ব নেয় না। তুমি যখন পড়ে যাবে, দেখবে বাম হাত তোমাকে প্রথমে ভর দেবে। এ সত্য অস্বীকার করার নয়। আগামী দিনের পৃথিবী দেখবে বাম দিককে সম্মান দিয়ে নতুন যুগের সূচনা করবে। তখন দেখে নিও, আমাদের সবাকার ফসলের ঘর এক হবে। আমরা সবাই  ফসল তুলে এক ঘরে রাখব যৌথ ফসল রাখার জায়গা হবে। আর মাঠে খড় পুড়িয়ে এক কেটলিতে জল গরম করে চা গলায় ঢেলে দিয়ে ভাবব, এই বিশ্বসংসার শুধু মানুষের নয়, একটি ক্ষুদ্র পোকারও এই পৃথবীতে অধিকার আমাদের মতো আছে। চাষের কাজ হল পুণ্য কর্ম। চাষের কাজে বার হয়ে গেলে একবার ফেরার সাকিম থাকে না। পশু মাঠ থেকে ফিরে এলে গোয়ালমন্দির পরিষ্কার করে রাখতে হয়, খাবার সাইত করে রাখতে হয়। 

হ্যাঁ, তা তো করি নিবারণদা। 

বাড়িতে ফিরে, গোয়ালমন্দির নিজের বসবাসের থেকে একটু তফাতে গড়ার পরিকল্পনা করো। যা কিছু কাজ করবে ধরে নেবে প্রতিটি কাজের গভীর অর্থ আছে। এই যে আমরা পারবাশুদেবপুরে আছি, চাষকর্ম করি,  গোয়ালমন্দির গড়ি, লাঙ্গল বানাই, আগড় গড়ি – এই সব কথা কেউ না কেউ যেমন নাদন চক্রবর্তী, সাধন দাস, কৃষ্ণরাম তাইমশাই বা শুভংকর কলমকার কেউ কেউ না কেউ লিখে রাখবে, যেমন লিখে রেখে গেছেন আমার  পিতৃদেব সত্যসাধন মণ্ডল - আমরা জানতেও পারব না পারবাসুদেবপুরের অক্ষর চাষি লিখে রাখবে আমাদের কথা। কেউ পড়ুক আর নাই বা পড়ুক, তবুও তো লেখা হবে। একশো বছর পরে ভাবো, পারবাসুদেবপুর কি এই ভাবে থাকবে ? আমাদের মতো চাষাভুষো যুক্তিহীন অবিদ্য্যার মানুষ নিয়ে। নতুন মানুষ আসবে, লাঙ্গলবিদ্যাকে উপহাস করবে। যারা লাঙ্গল বিদ্যার কথা লিখে যাবেন সেই সব আগামীদিনের আধুনিক মানুষ উপহাস করবে। আমরাও অতীতের বুনো জংলি মানুষদের উপহাস করি। সময়ের কোনো রূপ নেই। ধরাছোঁয়া নেই। সে বস্তু নয় বা তরল নয়। সময়কে আমরা নির্ধারণ করি, আলো অন্ধকারের মধ্য দিয়ে।  

তুমি ঠিক বলেছ। এখন ঘরে ঘরে আর লাঙ্গল তৈরি হয় না। পারবাসুদেবপুরের সেই সব দিন গেছে। তোমার মতো চমৎকার গোয়ালমন্দির গড়তে পারব না।

তা কেন পারবে না ?

পারব না। তোমার মতো সবকিছু হয় না। তুমি বিদ্যার গভীরতর অবস্থান স্পর্শ করো।

আমি কৃষিসরঞ্জাম গড়ার কাজ শিখেছি পিতৃদেবের কাছে। সেই কাজ জানি বলেই তোমাকে এতগুলি কথা বলার প্রয়োজন মনে করলাম। নিজের হাতেই নিজের গড়ে তোলা চমৎকার তুমি দেখনি। কেশব তুমি কি দেখেছ তোমার পূর্বপুরুষদের পাখির মতো শূন্যে উড়ে যেতে ?

না তা তো দেখি নাই নিবারণদা ? 

জলাশয় ও জলাজমিতে স্যাঁতস্যাঁতে শুকিয়ে এলে, মাটির ভিতরে জলের টান পড়লে, তল্লাটকে কেন জানি বড় মনে হয়। দীর্ঘ মনে হয় হাঁটা পথের। ফসলের জমি দেখে তখন মনে হয় উড়ে এসে বাজপাখি টোকা দিয়ে যেতে পারে। জলঢোঁড়া বাস্তুর ঘাটপুকুরে জিয়ল খোঁজে। এটা – ওটা সন্ধান চালাতে চালাতে, কপাল ভালো থাকলে ইঁদুর বা ব্যাঙ পেয়ে যায়। নিবারণ এবার চুপ করে গেল। কেশবনন্দনের সঙ্গে বকবক হয়ে গেল অনেকক্ষণ। কাজের বিস্তর ক্ষতি হয়ে গেল।

 নিবারণ চালতা সেদ্ধ করবে বলে, চালতার ওপরে হাত বোলাচ্ছিল। কেশবনন্দন ভাবছিল কি সব কথা, বলছিল পরস্পর, এখন মনে হচ্ছে কথাগুলি শত শত মাইল দূরে চলে গেছে। পূর্বপুরুষ কি করে আকাশে ওড়ে, সত্যিই কি ওড়ে, তা হলে একদিন এসে নিবারণদার কাছে জানতে হবে, মানবজীবনে অতীতকালও বর্তমানের মতো জীবন্ত হয় !!! 

নিবারণ হাতে তুলে রাখা চালতাটিকে গড়িয়ে দিল। চালতা গড়িয়ে লাঙ্গলের ফলার নিচে থেমে গেল। কেশবনন্দন চেল্লাতে থাকল,-- জেনে নেব... জেনে নেব নিবারণদা অতীত কেন বর্তমান সময়ের মতো বেঁচে থাকে।

নিবারণ বলল,-- মানুষের মস্তিস্ক আছে তাই। স্মৃতিশক্তি প্রখর।

জগতে কি আর কোনো প্রাণীর স্মৃতিশক্তি নাই নিবারণদা ? 

 

                                                            (ক্রমশঃ)

 

23 comments:

  1. লেখক শুভংকর গুহকে, শুভংকরদাকে আমি আদ্যোপান্ত এক নাগরিক মানুষ জানি কিন্তু তিনি তাঁর অন্তর মনন এবং সত্তায় যে আক্ষরিক অর্থেই একজন আবহমানকালের গ্রামজীবনের সহচর এবং তার অসামান্য রপকার তার প্রমান তিনি রাখছেন এই লেখায়। আন্তরিক অভিনন্দন শুভংকরদা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসিত কর্মকার অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি গ্রামজীবন নিয়েই সর্বাধিক লিখেছি।

      Delete
  2. এমন ভাবনা,এমন ভাষা আপনার মতো কলমকারের কাছেই পাই। খুব ভাল লাগল। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. পরের পর্ব প্রকাশ হলে জানাব তোমাকে রাজু।

      Delete
  3. অসাধারণ এই লেখা।
    আশ্চর্য করে দেয় এই ভাষা।
    লেখককে আমার শ্রদ্ধা জানাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার মন্তব্য আমাকে উৎসাহিত করে।

      Delete
  4. আগেই বলেছি,আপনার ভাষা আমাকে মুগ্ধ করে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ওপরে আপনার নাম না থাকলেও নির্দ্বিধায় চেনা যায় - 'এটা আপনারই লেখা। মননে - ভাষায়'

    ReplyDelete
    Replies
    1. যে কোনো লেখাই চেষ্টা। সেটাই করে যাচ্ছি বনমালী।

      Delete
  5. খুব ভালো লাগল। গভীর দর্শনের কথা গ্রামজীবনে ছড়ানো লাঙলের ফলার মতো জীবন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. চেষ্টা করছি শতানীক। এই জীবন আমার কাছে মায়া।

      Delete
    2. চেষ্টা করছি শতানীক। এই জীবন আমার কাছে মায়া।

      Delete
  6. লাঙ্গল আর মাটি, মাটি আর লাঙ্গল৷ মাটি মাটি গন্ধে ভরে গেলো৷ ভীষণ ভালো লাগলো দাদা৷

    ReplyDelete
  7. আপনি না লিখলে এই জীবনের কথা আর কার কাছে জানতে পারতাম!বস্তুর ভেতরের রহস্য খুলতে খুলতে "বাস্তব"কে অতিক্রম করে এক মায়াপৃথিবী রচনা করে এই লেখা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমার মতো লেখকের কাছ থেকে এই মন্তব্য পুরস্কারের মতো।

      Delete
    2. তোমার মতো লেখকের কাছ থেকে এই মন্তব্য পুরস্কারের মতো।

      Delete
  8. আপনি না লিখলে এই জীবনের কথা আর কার কাছে জানতে পারতাম!বস্তুর ভেতরের রহস্য খুলতে খুলতে "বাস্তব"কে অতিক্রম করে এক মায়াপৃথিবী রচনা করে এই লেখা।

    ReplyDelete
  9. আপনি না লিখলে এই জীবনের কথা আর কার কাছে জানতে পারতাম!বস্তুর ভেতরের রহস্য খুলতে খুলতে "বাস্তব"কে অতিক্রম করে এক মায়াপৃথিবী রচনা করে এই লেখা।

    ReplyDelete
  10. চুপ করে শুধু পড়ে যাই আর মিলিয়ে নিতে নিতে ডুবে যাই। অপূর্ব।

    ReplyDelete

  11. প্রতিটি শ্রমের পেছনে লুকিয়ে থাকে শিল্প আর প্রতিটি শিল্পের পেছনে শ্রম। মাঠ ভর্তি সবুজ ধানের সাথে যেমন মিশে থাকে কৃষকের অশ্রু ঘাম রক্ত তেমনি অজৈব লাঙ্গলের হাসি, কর্মতৎপরতা এবং নিষ্ঠা। সৌখিন ডাইনিং রুমে দুধসাদা ভাতের সামনে বসে ডায়েটিং করি তখন কি একবারও ভাবি নিবারণরা কিভাবে লাঙ্গল বানায় আর সেই লাঙ্গল সঙ্গমে সঙ্গমে কুমারী মাটিকে করে তোলে শস্য সম্ভবা। এ যেন এক লাঙ্গল পুরাণের গল্প। লাঙ্গল মই, গোয়াল, গোয়ালকাড়া এসব অনুষঙ্গে এ যেন এক গ্রামীণ যাপন চিত্র কথা। চোখে আঙ্গুল দিয়ে আরও একবার নিবারণদের দেখানো। শুভঙ্কর দা বরাবরের মতো এখানেও অক্ষর দিয়ে ছবি আঁকেন।নিবারণের মত আমরাও দেখি আমাদের পূর্বপুরুষদের ওড়াউড়ি। এক মায়া ও কুহকের ভিতরে দাঁড়িয়ে আমরাও যেন ফিরে যাই যন্ত্র সভ্যতা থেকে কৃষি সভ্যতায়, আজকের দিন থেকে পুরোনো দিনে,ফুরোনো দিনে------

    ReplyDelete

  12. প্রতিটি শ্রমের পেছনে লুকিয়ে থাকে শিল্প আর প্রতিটি শিল্পের পেছনে শ্রম। মাঠ ভর্তি সবুজ ধানের সাথে যেমন মিশে থাকে কৃষকের অশ্রু ঘাম রক্ত তেমনি অজৈব লাঙ্গলের হাসি, কর্মতৎপরতা এবং নিষ্ঠা। সৌখিন ডাইনিং রুমে দুধসাদা ভাতের সামনে বসে ডায়েটিং করি তখন কি একবারও ভাবি নিবারণরা কিভাবে লাঙ্গল বানায় আর সেই লাঙ্গল সঙ্গমে সঙ্গমে কুমারী মাটিকে করে তোলে শস্য সম্ভবা। এ যেন এক লাঙ্গল পুরাণের গল্প। লাঙ্গল মই, গোয়াল, গোয়ালকাড়া এসব অনুষঙ্গে এ যেন এক গ্রামীণ যাপন চিত্র কথা। চোখে আঙ্গুল দিয়ে আরও একবার নিবারণদের দেখানো। শুভঙ্কর দা বরাবরের মতো এখানেও অক্ষর দিয়ে ছবি আঁকেন।নিবারণের মত আমরাও দেখি আমাদের পূর্বপুরুষদের ওড়াউড়ি। এক মায়া ও কুহকের ভিতরে দাঁড়িয়ে আমরাও যেন ফিরে যাই যন্ত্র সভ্যতা থেকে কৃষি সভ্যতায়, আজকের দিন থেকে পুরোনো দিনে,ফুরোনো দিনে------

    ReplyDelete